ফরয নামাজের পর ১৭টি দোয়া ও আমল
ফরয নামাজের পর ১৭টি দোয়া ও আমল
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ। প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন?
আজকে আমি আমাদের প্রিয় নবী করিম (দ) ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর প্রতিদিন যে দোয়া ও আমল করতেন এবং উৎসাহিত করতেন সেগুলি
একসাথে উপস্থাপন করব ইনশা আল্লাহ
১৭টি দোয়া ও আমল কোন ওয়াক্তে করবেন, কতবার করবেন, করলে কি ফায়দা এবং কোন হাদিসে এই আমলগুলির বর্ণনা এসেছে বিস্তারিত জানার
জন্য শেষ পর্যন্ত দেখার অনুরোধ রইল
১) সালাম ফিরানোর সাথে সাথে ১ বার পড়বেন
আল্লাহু আকবার
২) আসতাগফিরুল্লাহ ৩ বার। অর্থ- হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
৩) আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম তাবারাকতা এয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম (১বার)
اللهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ،
تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
অর্থ- হে আল্লাহ তুমি শান্তিময় তোমার কাছ থেকেই শান্তি অবতীর্ণ হয়। তুমি বরকতময় হে পরাক্রমশালী ও মর্যাদা প্রদানকারী।
(মুসলিম)
৪) আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক (একবার)
আবু দাউদ এর ১৫২২ নং হাদিস মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, হে মু’আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি,
আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু’আয! আমি তোমাকে ওয়াসিয়াত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের পর এ দু’আটি কখনো পরিহার করবে নাঃ
اللَّهُمَّ
أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
"(অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ’ইবাদাতে আমাকে সাহায্য করুন)
৫) একবার
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ لاَ
إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ لاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إِيَّاهُ أَهْلَ النِّعْمَةِ
وَالْفَضْلِ وَالثَّنَاءِ
الْحَسَنِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُخْلِصِينَ
لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু
লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন কাদির, লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহু লা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, আহলান নেমাতি ওয়াল ফাদলি ওয়াস ছানাইল হাসানি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন ওয়ালাও কারিহাল
কাফিরুন (১বার) (নাসাই১৩৪)
৬) ‘আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আত্বাইতা, ওয়া লা মুত্বিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা ইয়াংফাউ জাল ঝাদ্দি মিনকাল ঝাদ্দি।’ (১বার)
اللّهُـمَّ لا مانِعَ لِما أَعْطَـيْت وَلا مُعْطِـيَ لِما مَنَـعْت وَلا يَنْفَـعُ ذا الجَـدِّ مِنْـكَ الجَـد
৭) আয়াতুল কুরসি একবার হজরত আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর
আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করে; তার মৃত্যু ছাড়া তাঁকে আর কোন কিছু জান্নাতে প্রবেশ করতে বিরত রাখতে পারবেনা।’ (নাসাঈ, ইবনু হিব্বান, বুলুগুল মারাম)
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ
لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ
وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ
وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ
السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا
وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা
হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্
সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি।
ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ
ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিয়্যুল আজিম।’
৮) সুবহা-নাল্লাহ (৩৩
বার)। আলহামদুলিল্লাহ (৩৩ বার)। আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)।
(লা-ইলা-হা ইল্লাললাহু ওয়া হদা হু লা- শারিকা-লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু
ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বদীর) (১ বার)।
এগুলো পাঠে আপনার
গুনাহ যদি সমুদ্রের
ফেনারাশির সমপরিমান হয় আল্লাহ তাও ক্ষমা করে দেন। (মুসলিম, ১২৪০)
৯) (আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্নাহ, ওয়া আউজুবিকা মিন ছাখাতিকা ওয়ান্নার) ফজর ও মাগরিবের পর। ৭ বার,
যারা এই দোয়া পড়বেন, সে দিন বা
সে রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন জান্নাত দান করবেন।
১০) সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সুরা নাস, প্রতিটি তিনবার করে, ফজর ও
মাগরিবের পর। রাসুল (সা.) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না।
১১) দরুদ শরিফ ১০ বার, ফজর ও মাগরিবের পর। যে এ আমল করবেন কেয়ামতের দিন রাসুল (সা.)-এর শাফা'আত লাভ করবেন।
১২) (‘রাদ্বীতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা’) ৩ বার, ফজর ও মাগরিবের
পর। রাসুলুল্লাহ (সা.) হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ আমলকারী ব্যক্তিকে
সন্তুষ্ট করবেন।
১৩) ফজর ও মাগরিবের পর ১০ বার পড়বেন
(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা
শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইউহই ওয়া ইউমিত ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন কাদির
১৪) ফজর ও আসরের পর সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত পড়লে ৭০ হাজার ফেরেশতা মাগফেরাতের দোয়া করেন (তিরমিজি ৩০৯০, আবু দাউদ ২৯২২)
১৫) ফজর ও আসরের পর ৩ বার পড়বেন (বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস-সামায়ি ওয়া
হুয়াস সামিউল আলিম।’ হঠাৎ বিপদ আসবেনা
(তিরমিজি, ইবনে মাজা, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ
১৬) ফজর ও আসরের পর ১০০ বার পড়বেন (সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি) যে এই আমল করবে কিয়ামতের দিন এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু হবেনা
(মুসলিম ২৬৯২)
১৭) ফজরের নামাজের পর ৩ বার পড়বেন (সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিজা নাফসিহি ওয়া জিনাতা
আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহি)। -সহিহ মুসলিম শরিফ : ৭০৮৮ এটি অন্যান্য দোয়ার চেয়ে ওজনে ভারি হবে
প্রিয় বন্ধুরা এই দোয়া ও আমলগুলি কয়েক মিনিট খরচ করে ওয়াক্তমত পালন করার চেষ্টা করবেন
বুখারী শরীফের ৪৪৫ নং হাদিস হজরত আবু
হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি নামাজের পর নামাজের স্থানে যতক্ষণ পবিত্র
অবস্থায় বসে থাকে,
ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করতে থাকে; তারা বলে- আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দাও, তার প্রতি দয়া কর।’
নামাজের পর যদি আপনি কয়েক মিনিট বসে বসে এই দোয়া গুলি পড়েন তাহলে ফেরেশতারাও আপনার জন্য দোয়া করবেন
আপনি যে আমল করছেন সে আমল গুলিরও ফায়দা আপনি পাবেন, লাভের উপর লাভ।
আল্লাহ তায়ালা আমাকে ও আপনাকে এ সব মাসনুন দোয়া ও আমলগুলি করার তৌফিক দান করুন আমিন
কোন মন্তব্য নেই