100% আল্লাহর শিখানো আমল। সুরা বনি ইসরাইলের শ্রেষ্ঠ ওজিফা। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতার আমল।
বিছমিল্লাহির
রাহমানির রাহিম
100% আল্লাহর শিখানো আমল।
সুরা বনি ইসরাইলের শ্রেষ্ঠ ওজিফা। জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতার আমল।
আজকে যে আমলটি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সে আমলটির স্বয়ং আল্লাহর শিখানো আমলএ আমলটি যুগে যুগে অনেক নবীরা করেছেন সাহাবিরা করেছেন, আল্লাহর অলিরা করেছেনঅনেকে এই আমলটি করে দুনিয়াতে সফল হয়েছেন অনেকে আল্লাহর অলি হয়ে গেছেন,আর যারা আমলটি করেননি তারা ধ্বংস হয়েছেন
এ আমলটি এমন এক আমল যেটি শুধু ইসলাম ধর্মে নয় অন্যান্য
ধর্মেও এই আমলটি খুবই গুরুত্ব পেয়েছে এমন
মূল্যবান গুরুত্বপূর্ণ সর্বজন স্বীকৃত আমলটি আজ কয়েকটি ঘটনার মাধ্যমে আপনাদের
সামনে তুলে ধরব
যারা দুনিয়াতে সফলতা চান, জীবনের সর্বক্ষেত্রে সফলতা চান মৃত্যু
সময় কলমা চান, খেরাতে মুক্তি চান তাদের জন্য আজকের আমলটি
খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু আমলটি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা শিক্ষা দিয়েছেন সেহেতু এই
আমলটি প্রত্যেক মুসলমানের জন্য শিখে রাখা ফরয। আর যারা আমলটির ব্যপারে অজ্ঞতার
কারনে ভুল করেছেন তাদের জন্য উচিত বিপদ আসার আগেই তওবা করে নেয়া নিজেকে শুধরে নেয়া প্রথমে
এই আমলটির হক আদায় না করার কি পরিণতি সে সম্পর্কে আল্লামা ইবনে জওজি লিখিত একটি
ঘটনা বলব
মুহাদ্দিস ইবনে জওজি লিখেন- আরদাশির নামক এক বাদশা ছিল তিনি
দেখতে খুবই সুন্দর ছিলেন, তিনি আশে পাশের বেশ কিছু এলাকা দখল করেন কিন্তু একটি এলাকা
তিনি দখল করতে পারেননা, আরদাশির সে এলাকায় হামলা করতে গিয়ে একটি কেল্লার মধ্যে ফেসে
গেলেন, আর সে এলাকার জিনি বাদশা সে বাদশার এক মেয়ে
ছিল, সে মেয়ে আরদাশির সৌন্দর্য্য দেখে তার
প্রতি আসক্ত হয়ে যায়, আর সে মেয়ে আরদাশিরকে পাওয়ার জন্য নিজের
পিতাকে হত্যা করার জন্য আরদাশিরকে সাহায্য করে, আর আরদাশিরকে বিয়ে করে,
বিয়ের রাতে সে মেয়েটি বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে করট বদলাতে থাকে, তখন
আরদাশির বলে কি ব্যপার, মেয়েটি বলে বিছানাটি ঠিক না তাই আমার ঘুম
আসছেনা, তখন আরদাশির বাতি দিয়ে দেখেন বিছানার চাদরের নিচে একটি সুতা, আর
এই সামান্য সুতার কারনে রাজকন্যার ঘুম আসেনা, মেয়েটি
বলে প্রতিদিন আমার বাবা আমার বিছানা নিজে করে দিতেন,
বাজারের সবচেয়ে দামী ও সুন্দর জামাটি আমার জন্য কিনে আনতেন, আমার
বাবা কোনদিন আমার অভাব অপুরন রাখেনি, তখন আরদাশির বলেন কি বল? যে
পিতা তোমার সাথে এত সুন্দর আচরন করেছে তার সাথে তুমি কি কারনে গাদ্দারি করলে? সে
তুমি আমার সাথেও গাদ্দারি করতে পার, বলে সে নারীকে আরদাশির হত্যা করে ফেলল।
বনি ইসরাইলের এক বুযুর্গ ছিলেন তার দোয়া কবুল হত, উনার কাছে এক লোক দোয়া জন্য আসলেন লোকটি
বুযুর্গের ঘরে ঢুকার সময় দেখলেন বুযুর্গের ঘরের দরজায় ২টি
শুকর বাঁধা আছে, আর বুর্যুগ সে ২টি শুকরকে খাবার খাওয়াচ্ছে,
সে লোক এ দৃশ্য দেখে হয়রান,
আর চিন্তা করতে লাগলেন এত বড় বুর্যুগ যিনি মুস্তাজাবুদ
দাওয়াত, যার দোয়া আল্লাহ তায়ালা সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন, কিন্তু উনি শুকর পালছেন, তাকে
খাবারও খাওয়াচ্ছেন, লোকিট বুযুর্গের খেদমতে সব সমস্যার কথা
বললেন আর দোয়া করালেন, সবশেষে সে
লোকটি বুযুর্গকে প্রশ্ন করলেন হুযুর বেয়াদবী মাফ করবেন, আপনি যুগের এত বড় বুযুর্গ কিন্তু
আপনি শুকর কেন লালন পালন করছেন? তখন সে বুযুর্গের চোখে পানি চলে এল তিনি
বললেন এরা আমার মা বাবা তারা কাফের ছিল আর একদিন এমন কুফুরী কথা বলল আল্লাহ
তাদের উপর আযাব নাজিল করলেন ফলে তারা শুকর হয়ে গেল,
যেহেতু তারা আমার মা বাবা তাই শুকর হওয়া সত্বেও আমি তাদের
খেদমত করে যেতে লাগলাম, আর আমার মা বাবার খেদমতের বরকতে আল্লাহ আমাকে এই মর্যাদা
দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ ইমাম আবু হানিফার আমলটি আরো চমৎকার ইমাম আবু
হানিফার একজন সাগরেদ ছিল যিনি সুন্দর ওয়াজ করতেন, আর তার ভক্ত ছিল ইমাম আজম এর মা,
একদিন ইমাম আজম এর মা ইমাম আজমকে বলে বেটা অমুকের
কাছে গিয়ে এই মাসায়ালাটি জিজ্ঞেস করে আস, ইমাম আজম বলল মা
আমি মাসায়ালাটি বলি?
মা বলে না বেটা তুমি এখনও ছোট, তার কাছ থেকে জেনে আস, মায়ের কাছে ছেলেরা সব সময় ছোটই থাকে তখন
ইমাম আজম সে সাগরেদের ঘরের দরজার কড়া নারল
সাগরেদ ইমামকে দেখে বললেন হুজুর আপনি কেন এসেছেন আমার
কাছে খবর দিলে আমি চলে আসতাম, তখন ইমাম বললেন আমার মা তোমার ভক্ত একটি
মাসায়ালা জানতে চায়,
সাগরেদ মাসায়ালার সমাধান দিতে পারেনা, তখন ইমাম আজম বলে আমি তোমাকে মাসায়ালার সমাধান বলছি তুমি
তা আমাকে বলবে আর আমি আমার মাকে গিয়ে বলব তুমি বলেছ।
তাহলে আমার মা তোমার নাম শুনলে বেশী মুতমাইন হবে। দেখুন
এমনই আমাদেরও মা বাবা যদি কোন কথা বলে যা আমাদের কাছে অযৌক্তিক লাগে কিন্তু
মা বাবার সম্মানার্থে সে অযৌক্তিক কাজই যদি জায়েজ হয় তা করা হল আদব।
যদি মা বাবা কাফের বা মুশরিকও হয় তবুও তাদের সাথে সদব্যবহার
করার হকুম আছে। যেমন আবু হুরায়রা (রা) কে তাঁর মা নবীর দরবারে যাওয়ার কারনে মারধর
করত, আবু হুরায়রা মায়ের সাথে বেয়াদবী করতনা বরং নবীর দরবারে এসে
আরজ করে এয়া রাসুলাল্লাহ আমার মায়ের জন্য দোয়া করুন যেন তিনি ইসলাম কবুল করেন,
নবীজি দোয়া করেন আর আবু
হুরায়রা (রা) এর মা ইসলাম কবুল করেন।
হযরত ওয়ায়েস করনী যিনি নবী প্রেমে পাগল ছিলেন কিন্তু
নিজের মায়ের অসুস্থতার কারনে সে নবীকে দেখতে আসতে পারেননি তাই নবীজি সে ওয়ায়েস
করনীর জন্য নিজের জামা উপহার পাঠালেন আর সাহাবীদের বললেন- তাকে পেলে
তার দিয়ে দোয়া করাবে কেননা তার দোয়া কবুল হয়, দেখুন মায়ের
খেদমতের কারনে ওয়ায়েস করনীর মর্যাদা কত বেশী হল।
দুনিয়াতে যত সফল মানুষ দেখবেন তাদের যদি প্রশ্ন করেন আপনার সফলতার
পিছনে কার দোয়া আছে দেখবেন ৯৯% বলবে আমার মা বাবার দোয়া, যারা মা বাবাকে কষ্ট দেয় তারা দুনিয়াতে সফল হতে পারেনা আখেরাতেও
রয়েছে তাদের জন্য আযাব, এমনকি যারা মা বাবাকে কষ্ট দেয় তারা
মৃত্যুর সময় কলমাও পড়তে পারেনা
যেমন প্রসিদ্ধ সাহাবি হযরত আলকামা মৃত্যুর সময় কলমা পড়তে পারছিলনা
তখন নবীজি আলকামার বৃদ্ধা মাকে প্রশ্ন করলেন
আলকামার প্রতি তার মা সন্তুষ্ট কিনা? বৃদ্ধা মা বলল সে আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তাই
তার প্রতি অসন্তুষ্ট, তখন নবীজি বৃদ্ধাকে নিজের সন্তানকে ক্ষমা
করে দিতে বলেন কিন্তু বৃদ্ধা ক্ষমা না করার শপথ করেন, তখন নবীজি আলকামাকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন বৃদ্ধা
নিজের সন্তানকে জীবন্ত জ্বালিয়ে ফেলবে শুনে ক্ষমা করে দিলেন ফলে আলকামা কলমা পড়ে
মৃত্যু বরণ করলেন সে জন্য
আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে এরশাদ
করেন
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে
ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্বব্যবহার কর।তাদের মধ্যে কেউ
অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে
তাদেরকে `উহ' শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে
শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে
মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের
প্রতি রহম কর,যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন। [সুরা
বনী-ইসরাঈল - ১৭:২৪]
এতক্ষনে বুঝতে পেরেছেন আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কি আমল
শিক্ষা দিয়েছেন, মা বাবাকে সন্মানও করতে হবে তাদের
সাথে বেয়াদবী করা যাবেনা, উহ শব্দও করা যাবেনা, তাদের সাথে চোখ রাঙ্গিয়ে, বুক ফুলিয়ে, গলার স্বর উঁচু করে কথাও বলা যাবেনা, কথা বলতে হবে
অতি নরম সুরে। সা বাবার প্রতি এমন আদব স্বয়ং আল্লাহ শিক্ষা দিচ্ছেন, আর তাদের জন্য কি দোয়া করবেন তাও আল্লাহ বলে দিয়েছেন।
সুতরাং যারা এতদিন মা বাবার সাথে বেয়াদবী করেছেন তারা যদি
জীবিত থাকে ক্ষমা চেয়ে নিন, নতুবা যতই হজ্ব করুন, নামাজ পড়ুন মৃত্যুর সময় কলমা নসিব হবেনা।
কোন মন্তব্য নেই