আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার ফজিলত। astaghfirullah ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম

 বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার ফজিলত। astaghfirullah ইস্তেগফার পড়ার নিয়ম



প্রিয় বন্ধু! আজকে আমি আপনাকে জানাব, এসতেগফার থেকে কি কি উপকারিতা লাভ করা যায়, কিভাবে ফায়দা লাভ করা যায়,

আর এই সবকিছু আমি কোরআন ও সুন্নতের আলোকে জানাব, আমি আশা করি আজকের এই আলোচনাটি আপনার চোখ খুলে দিবে আপনার অভাব থেকে মুক্তি, বিপদ থেকে মুক্তি, ঋণ থেকে মুক্তি, রোগ থেকে মুক্তি, শত্রু থেকে মুক্তি ও সকল সমস্যা সমাধানে ১০০% সঠিক সমাধানের রাস্তা দেখাবে,

প্রিয় বন্ধু! প্রথমে আমি পবিত্র কুরআনে এস্তেগফারের ব্যপারে কি কি বলেছে তা জিকির করব- আল্লাহ তাযালা এরশাদ করেন

وَاسْتَغْفِرِ اللهَ إِنَّ اللهَ كَانَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘‘আল্লাহর কাছে তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সুরা নিসা ১০৬)

সুরা নসরে এরশাদ করেন
 فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّه كَانَ تَوَّابًا
‘‘তুমি তোমার রব-এর প্রশংসার সাথে পবিত্রতা জ্ঞাপন কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তাওবাহ্ গ্রহণকারী

সুরা হা মিম সিজদার ৬ নং আয়াতে বলেন
أَنَّمَا إِلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَاسْتَقِيمُوا إِلَيْهِ وَاسْتَغْفِرُوهُ وَوَيْلٌ لِلْمُشْرِكِينَ
‘‘তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ। অতএব তাঁরই পথ অবলম্বন কর এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর দুর্ভোগ মুশরিকদের জন্য।’’

সুরা নিসার ১১০ নং আয়াতে বলেন
وَمَنْ يَّعْمَلْ سُوءًا أَوْ يَظْلِمْ نَفْسَه ثُمَّ يَسْتَغْفِرِ اللهَ يَجِدِ اللهَ غَفُورًا رَّحِيمًا
‘‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুল্ম করবে অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’’

প্রিয় বন্ধু এখানে এসতেগফারের ব্যপারে কোরআনের কয়েকটি আয়াত শুনালাম আসুন এবার রাসুলে পাক (দ) এর কিছু ফরমান শুনাই

নাবী (সা.) বলেছেন : নিশ্চয় শয়তান বলেছে, ‘হে আমার রব! আপনার ইয্যতের ক্বসম! আমি আপনার বান্দাদেরকে অবিরামভাবে পথভ্রষ্ট করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে প্রাণ থাকবে।

(শয়তানের এই কথার উত্তরে) রব বলেছেন, ‘আর আমার ইয্যত ও উচ্চ মর্যাদার ক্বসম! আমি অবিরামভাবে তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব, যতক্ষণ তারা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে।

আনাস ইবনু মালিক বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন :

হে আদম সন্তান! যতক্ষণ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, ততক্ষণ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না।

হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের যে পর্যন্ত দৃষ্টি যায় সে পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না।

হে আদম সন্তান! তুমি যদি জমিন ভরা গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে আমি জমিন ভরা ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।

নাবী (সা.) প্রতিদিন ১০০ বার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি বলেছেন, আমি দিনে ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।

তিনি আরও বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) ও তাওবাহ্ করে থাকি।

ইবন উমার বলেন, একই মজলিসে বসে নাবী (সা.)-এর (এই ইস্তিগফারটি) পাঠ করা অবস্থায় ১০০ বার পর্যন্ত গুণতাম,

رَبِّ اغْفِرْ لِىْ وَتُبْ عَلَىَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
রাব্বিগ ফিরলি ওয়াতুব আলাইয়্যা ইন্নাকা আনতাত তাওয়্যাবুর রাহিম

নাবী (সা.)-এর জীবনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়ার পরও অর্থাৎ তিনি নিষ্পাপ হওয়ার পরও যদি প্রতিদিন ৭০ থেকে ১০০ বার মহান রব-এর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন,

তাওবাহ্ করেন তাহলে আমার-আপনার মতো পাপীদের কী করা উচিত? প্রতিদিন কতবার ইস্তিগফার ও তাওবাহ করা উচিত?

নাবী (সা.) একদিন মহিলাদের উদ্দেশে বললেন, হে নারীসমাজ! তোমরা দান-সাদকাহ করতে থাক ও বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা কর।

কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই তোমাদেরকে দেখলাম। পরকালে যার আমলনামায় বেশি বেশি ইস্তিগফার পাওয়া যাবে তার জন্য সুসংবাদ।

নাবী (সা.) বলেছেন :
طُوبٰى لِمَنْ وَجَدَ فِي صَحِيفَتِهِ اسْتِغْفَارًا كَثِيرًا
যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ক্ষমা প্রার্থনাযোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দবার্তা।

আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত পাওয়ার জন্য ইস্তিগফার করা জরুরি। ইস্তিগফারের কারণে আল্লাহ তাওবাকারীর ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে বরকত দান করেন।

নূহ (আ.) তার জাতিকে তাদের রবের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার কয়েকটি প্রতিদানে কথা উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ তাআলা নূহ (আ.)-এর বক্তব্য তার কালামে উল্লেখ করেছেন,

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّه كَانَ غَفَّارًا -يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا- وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

আর আমি বলেছি, ‘তোমরা তোমাদের রব-এর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় তিনি অতীব ক্ষমাশীলতিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন

আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের জন্য বাগ-বাগিচা দেবেন আর দেবেন নদী-নালা’ (সুরা নুহ ১০-১২)

এই আয়াতগুলোতে ইস্তিগফারের ৫টি লাভের কথা বলা হয়েছে :
মুষলধারে বৃষ্টি লাভ;
ধন-সম্পদ লাভ;
সন্তান-সন্ততি লাভ;
বাগ-বাগিচা লাভ;
নদী-নালা লাভ।

এতগুলো লাভ শুধু ইস্তিগফার করলে। তারপরও আমরা কেন ইস্তিগফার করবো না?

আমরা ইস্তিগফার করবো হতাশা থেকে মুক্তির জন্য। গুনাহ করতে করতে আমরা একটা পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়ি যে, আমরা এত গুনাহ করেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন?

এই ভেবে হতাশ হয়ে পড়ি আর সেই সুযোগে শয়তান আমাদের দ্বারা আরও গুনাহ করায়।

শয়তানকে আমরা তিনবার সফল করি : প্রথমবার গুনাহ করে; দ্বিতীয়বার হতাশ হয়ে; তৃতীয়বার ইস্তিগফার ও তাওবাহ্ না করে গুনাহ করতে থেকে।

তাই শয়তানকে ব্যর্থ করে আমরা যদি সফল হতে চাই এবং হতাশা থেকে বাঁচতে চাই তাহলে আমাদেরকে এখন থেকেই আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে হবে। শুধু বলুন আসতাগফিরুল্লাহ!

আল্লাহ তাঁর রহমত থেকে নিরাশ হতে নিষেধ করেছেন এবং সকল গুনাহ মাফ করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন :

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلٰى أَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إِنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّه هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ

বল, ‘হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা যুমার ৫৩)

এ আয়াত দ্বারা বুঝা গেলো যে, শয়তানের প্ররোচনায় যত গুনাহই আমরা করে ফেলি না কেনো আমাদের হতাশ হওয়া যাবে না। 

বরং আল্লাহর রহমতের আশায় আশাবাদী হয়ে তাঁর কাছে মাফ চাইতে থাকতে হবে। তাহলে ক্ষমাও পাব, রিজিক, ধন সম্পদ, সন্তানাদি সহ সব অভাব আল্লাহদুর করে দিবেন গুনাহ হয়ে গেলে সাথে সাথে ক্ষমা চেয়ে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, ফরয নামাজের সালাম ফিরিয়ে ৩ বার (আসতাগফিরুল্লাহ ) পড়া নবীজির সুন্নত

উযূ করার পর ইস্তিগফার করা সুন্নাহ। নাবী (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি উযূর পর (নিম্নের জিকির) বলে, তার জন্য তা একটি পাতায় লিপিবদ্ধ করা হয়। অতঃপর তা সীল করে দেয়া হয়, যা ক্বিয়ামাত দিবস পর্যন্ত ভঙ্গ করা হয় না।’’

’’
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَّا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
উচ্চারণ : সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লা- ইলা-হা ইল্লা- আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা।

তাছাড়া হাটতে বসতে আসতাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকবেন তাহলে আপনার সকল মনের আশাই আল্লাহ পুরণ করে দিবেন আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ, রাতে ঘুমানোর আগে কমপক্ষে ১০ বার পড়বেন।

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.