১৪ বার কসম করে আল্লাহ যে আমল দিয়েছেন। হযরত সালমান ফারসির শ্রেষ্ঠ আমল। সফলতা লাভের আমল
১৪ বার কসম করে আল্লাহ যে আমল দিয়েছেন। হযরত সালমান ফারসির শ্রেষ্ঠ আমল। সফলতা লাভের আমল
আজকে যে
আমলটি আপনাদের সাথে শেয়ার করব সে আমলটির
ব্যপারে বলার আগে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ১৪ বার কসম করেছেন।
এতগুলি কসম
কোরআনের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
যে আমলটি
করলে আপনি সফল হবেন না করলে বিফল হবেন সাহাবায়ে
কেরাম এ আমলটি করেছেন তাই তারা আজো স্মরনীয় হয়ে আছেন বিশেষ
করে হযরত সালমান ফারসি (রা)
জীবন থেকে আমলটির উদাহারন তুলে ধরব ইনশা আল্লাহ এই আমলটির গুরুত্ব বুঝানোর
জন্য আল্লাহ তায়ালা পরপর ১৪ বার কসম করেছেন যেমন (১) সূর্যের কসম (২) সূর্যের আলোর
কসম (৩) চাঁদের কসম (৪) চাঁদের কিরনের কসম (৫) দিনের কসম (৬) দিনের আলোর কসম
(৭) রাতের কসম (৮) রাতের অন্ধকারের কসম (৯) আসমানের কসম (১০) আসমানের সৃষ্টির কসম (১১)
পৃথিবীর কসম (১২) পৃথিবীর বিস্তৃতির কসম (১৩) মনের কসম (১৪) মনকে মানুষের
উপযোগী করে সৃষ্টির কসম
আমলটি বুঝার
জন্য সালমান ফারসি (রা) এর জীবনের ঘটনাটি শুনতে হবে তবেই আমলটি বুঝতে পারবেন সালমান
ফারসি নিজের মুখে বলেন আমার বাবা অগ্নিপূঁজারি ছিলেন, তিনি
আমাকে সারাক্ষণ ঘরে আগুন জ্বালাতে বন্ধি করে রাখতেন,
একদিন আমার বাবা
অন্য জায়গায় বাড়ী বানাতে শুরু করলেন, আর সে বাড়ির কাজ দেখাশুনা করার জন্য আমাকে
পাঠালেন, আর পথিমধ্যে আমি খ্রিষ্টানদের এবাদত দেখে তাতে
মুগ্ধ হয়ে গেলাম, সারাদিন সেখানে থাকলাম তাদের কথা শুনলাম, আমার
বাবা এসব জানতে পেরে আমাকে আবার ঘরে বন্ধি করে রাখল, আমি
খ্রিষ্টানদের সাহায্যে আমার বাবার বন্ধি থেকে মুক্ত হয়ে একটি ব্যবসায়ীক কাফেলার
সাথে সিরিয়ায় চলে গেলাম,
সেখানে একজন
রাহেবের খেদমতে নিয়োজিত থাকলাম, রাহেব মৃত্যু বরণের সময় আমাকে বলল আমি
এই এলাকার মানুষের টাকা পয়সা যা মানুষ গরীবদের জন্য দিত সব সারাজীবন জমা করেছি,
এটা দেখে তার
প্রতি আমার অনেক ঘৃণা হল, তার মৃত্যু হলে আমি এলাকার লোকদেরকে তার এই
কুকৃত্তির কথা জানালাম ফলে তারা
তাকে দাফন থেকে বিরত থাকল আর তার সকল সম্পদ গরিবদের মাঝে বিলি করে দির, তার
স্থানে আরো একজন রাহেব নিযুক্ত হল সে ছিল
খুব ভালো, তার সান্নিধ্যে আমি অনেক সৎ গুনাবলি শিখেছি, তাঁর সান্নিধ্যে আমি মনকে পবিত্র করেছি,
একদিন তিনি
অসুস্থ হয়ে যান আর মৃত্যু পথযাত্রি হয়ে যান, তখন তিনি আমাকে
তার একজন সাথীর কাছে চলে যেতে বলেন, আর
বলেন সেও আমার মতের উপর আছে বাকী সকলে গোমরাহ, ধর্মকে পরিবর্তন করে ফেলেছে,
সে রাহেব
আমাকে বলল আমার মৃত্যুর পর তুমি মদিনায় চলে যাবে সেখানে আখেরী নবী আসবে, আর
তার ৩টি আলামত আমাকে বললেন, সে নবী সদকা খাবেনা, হাদিয়া
দিলে খাবে,
আর পিঠে
থাকবে মোহরে নবুয়ত, আমি
রাহেব এর মৃত্যুর পর কিছুদিন পর মদিনায় একটি
কাফেলার সাথে রওয়ানা হলাম, কিন্তু কাফেলার সকলে মিলে আমাকে এক স্থানে এক
ইহুদীর কাছে গোলাম বলে বিক্রী করে দিল, আমি ইহুদীর
বাগানে গোলামির কাজ করতে লাগলাম,
কিন্তু আমার
ফিকির ছিল শেষ নবীর সাথে সাক্ষাৎ, একদিন আমার মালিক এর এক চাচাত ভাই মদিনা
থেকে আসল সে আমাকে আমার মালিক থেকে কিনে মদিনায় নিয়ে গেল,
আমি মদিনায়
এসেই আমার রাহেব মদিনা সম্পর্কে যা যা বলেছেন সব মিল পেলাম, আমি
তার খেজুর বাগানে কাজ করতাম, একদিন আমার মালিককে এক ব্যক্তির সাথে
বলাবলি করতে শুনলাম যে মদিনার কুবায় শেষ নবী এসেছে এ কথা শুনে আমি খুবই আপ্লুত
হয়ে আমার মালিককে প্রশ্ন করলাম কে এসেছে?
আমার মালিক
আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল আর বলল তোমার কাজ তুমি কর, আমি রাতের বেলা কুবায় চলে গেলাম আর
নবীজির সামনে কিছু খেজুর পেশ করলাম আর বললাম এগুলি সদকার খেজুর, নবীজি
তা খেলেন না সাথীদেরকে খেতে দিলেন, তারপরের দিন আমি কিছু খেজুর নিয়ে গেলাম আর
নবীজিকে দিলাম আর বললাম এগুলি হল হাদিয়া তখন নবীজি তা থেকে খেলেন ফলে তিনি
যে নবী তার ২টি প্রমাণ পেয়ে গেলাম তৃতীয় আলামত
মুহরে নবুয়ত দেখার জন্য নবীর পিছে পিছে হাটতে লাগলাম তখন নবীজি আমার উদ্দেশ্য
বুঝতে পেরে নিজেই পিঠের উপর থেকে কাপড় সরিয়ে দিলেন তখন আমি আবেগাপ্লুত
হয়ে উপুড় হয়ে মুহরে নবুয়তে চুমু খেলাম, আর
কাঁদতে লাগলাম নবীজি আমাকে নিজের সামনে বসালেন নবীজিকে আমি আমার সমস্ত ঘটনা বললাম, তখন
নবীজি আমাকে গোলামি থেকে মুক্ত
করার জন্য মালিকের সাথে কথা বলতে বললেন, মালিক
৪০ ওকিয়া ও ৩০০ খেজুর গাছ রোপনের কথা বললেন যুদ্ধের ময়দান থেকে একটি ডিমের মত
স্বর্ণের মুর্দা আসল
নবীজি তা
আমাকে দিয়ে বললেন এটা তোমার মালিককে দিবে এটা ৪০ ওকিয়া হবে, অথচ
তা ছিল অতি ছোট কিন্তু আমি যখন মালিককে দিলাম মালিক ওজন করে দেখে তা ৪০ ওকিয়ার
সমান, সুবহানাল্লাহ।
তারপর
সাহাবীদেরকে সালমানকে চারা দিতে বললেন কেহ ৩০টি, কেহ ২০টি এভাবে৩০০টি খেজুর চারার ব্যবস্থা হয়েগেল, এবার
নবীজি সালমানকে বললেন তুমি গর্ত করে রাখবে গর্ত করা হলে আমাকে বলবে আমি
নিজ হাতে চারাগুলি রোপন করে দিব, নবীজি কথামত নিজ হাতে ৩০০টি চারা রোপন করে
দিলেন।
এবং শর্ত
পুরণ হওয়ায় হযরত সালমান ফারসিকে ইহুদী আযাদ করে দিলেন কোন
কোন বনানায় আছে হযরত আলী (রা) চারা দিলেন নবীজি রোপন করলেন আর নবীজি বললেন পিছনে
ফিরে তাকাবেনা যখন ৩০০ চারা রোপন শেষ হল পিছনে ফিরে দেখা গেল সবগুলি
চারা বড় হয়ে তাতে খেজুর ধরে পেকে আছে, সুবহানাল্লাহ
এ ঘটনায় দেখা
যায় হযরত সালমান ফারসি (রা) সত্যের সন্ধ্যানে ঘর ছেড়েছেন, বাড়ী ছেড়েছেন, এমনটি এক পর্যায়ে নিজ দেশ ছাড়তে গিয়ে
প্রতারকের ধোকায় পরে গোলামির জিঞ্জির গলায় পরেছেন তবুও
পিছ পা হননি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, নফসের গোলামি না করে
সত্যকে পাবার
লক্ষে সব কষ্ট সহ্য করেছেন আর আল্লাহ তায়ালা এক সময় তাঁকে কামিয়াবি দান করেছেন হযরত
সালমান ফারসি (রা) কে আল্লাহ দুনিয়ার জমিনেও সাহাবীর মর্যাদা দিয়েছেন দুনিয়াতে
ইজ্জত সম্মানের তাজ পরিধান করিয়েছেন, আখেরাতেও আছে অফুরন্ত নেয়ামত।
আমাদেরও সদা
সর্বদা মনকে পবিত্র রাখতে হবে মনের বাগানে সু স্বভাবের চারা রোপন করতে হবে সু
স্বভাবের চারা যেমন (১) খওফে খোদা (২) ছবর (৩) তাওয়াক্কুল (৪) শোকর (৫) জিকরুল্লাহ (৬) নবীর প্রেম (৭) লোভ হীন মন (৮) হিংসা থেকে মুক্ত (৯) পরোপকার (১০)
শরীয়তকে মান্য করা এ ১০টি গুনের চারা যদি মনে রোপন করে যদি মনটাকে পবিত্র করতে
পারেন তাহলে আপনি সফল সে জন্য আল্লাহ সুরা আস শামসে ১৪ বার কসম করে করে এরশাদ করেন
قَدْ أَفْلَحَ مَن زَكَّاهَا
যে নিজের মনকে পবিত্র করে, সেই সফলকাম হয়।
وَقَدْ خَابَ مَن دَسَّاهَا
এবং যে নিজের মনকে অপবিত্র করে, সে বিফল হয়।
সফল হবে সে
যে জান্নাতে যেতে পারবে আর বিফল হবে যে জাহান্নামে যাবে, সুতরাং
জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রধান কাজ হল মনকে পবিত্র করতে হবে ।
মন অপবিত্র
হয় মজার লোভে গুনাহে লিপ্ত হলে, আর মন পবিত্র হয় সাজার ভয়ে গুনাহ ত্যাগ
করলে। তাই আসুন আমরা মনের বাগানে বর্ণিত ১০টি সু স্বভাবের চারা রোপন করে মনকে
পবিত্র করি আর দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার মুকুট পরিধানের ব্যবস্থা করি।
কোন মন্তব্য নেই