৫ মিনিটে বাড়ী গাড়ি ধন সম্পদ লাভের আমল। হযরত মুসার (আ) শ্রেষ্ঠ ওজিফা

 

৫ মিনিটে বাড়ী গাড়ি ধন সম্পদ লাভের আমল। হযরত মুসার (আ) শ্রেষ্ঠ ওজিফা



প্রিয় বন্ধুরা আজকে এমন একটি শক্তিশালী আমল আপনাদের সামনে তুলে ধরব যে আমলটি করলে আপনার দুনিয়াতে আর কোন অভাব থাকবেনা, আমলটি হযরত মুসা () করেছেন, আমলটি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ () করেছেন, আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই আমলটি খুব গুরুত্বের সাথে পালন করা, তাহলে আল্লাহ তায়ালা মুহুর্তের মধ্যে আমাদের রিজিকের সমস্যা সমাধান করে দিবেন, আমাদের বাড়ী ঘরের সমস্যা সমাধান করে দিবেন, আমাদের থাকা খাওয়ার সমস্যা সমাধান করে দিবেন, আমাদের বিয়ে শাদির সমস্যা সমাধান করে দিবেন, মোটামোটি দুনিয়াবি যত চাওয়া পাওয়া আছে সেগুলিও আল্লাহ আমাদের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা করে দিবেন এবং আখেরাতেও এর বদলায় আল্লাহ আমাদেরকে হাশরের মাঠের সকল মসিবত ক্ষুধা তৃষ্ণা গরম পেরেশানী থেকে হেফাজত করবেন তাহলে আসুন খুব মনযোগ দিয়ে আজকের আমলটির বুঝার শিখার চেষ্টা করি  হযরত মুসা () আমলটির পাশা পাশি একটি দোয়াও পড়েছেন যে দোয়াটি আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে তুলে ধরেছেন, সে বরকতময় দোয়াটিও আজ আলোচনা করব, তাই ধৈর্য্য সহকারে অবশ্যই শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই থাকবেন আশা করি

পবিত্র কুরআনের ১টি সুরার নাম হল আন নমল, নমল বলা হয় পিপড়াকেআল্লাহ তায়ালা এই সুরাতে সুলাইমান () এর যুগের পিপড়ার ঘটনা বয়ান করেছেন, হযরত সুলাইমান () যখন লস্করদেরকে দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন তখন পিপড়াদের সরদার তার অনুচরদেরকে সতর্ক করে বললেন তোমরা নিজ নিজ বাসস্থানে ঢুকে যাও, কারন সুলাইমান () এর লস্কররা আসছেন, তারা অজ্ঞাতসাড়ে তোমাদেরকে পদপিষ্ট করতে পারে একটি পিপড়া অপর পিপড়াদের কল্যাণ কামনা করার কারনে আল্লাহ তায়ালা সে পিপড়ার প্রতি এত বেশী খুশি হয়েছেন সে পিপড়ার নামে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাবে সুরা নাজিল করেছেন তাহলে যদি একটি পিপড়া তার সমগোত্রিয়দের প্রতিসদাচরন করার কারনে সমগোত্রিয়দের কল্যাণ কামনা করার ফলে আল্লাহ এত খুশি হয়ে থাকেন তাহলে আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে মানুষ যদি অপর মানুষের কল্যাণ কামনা করে আল্লাহ কতটা খুশি হবেন একবার চিন্তা করে দেখুন

মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে উত্তম মানুষ/ ভালো মানুষ সে যে আল্লাহর অপর বান্দার উপকার করেমানুষের উপকার করা এটা ভালো মানুষ হওয়ার আলামতসেজন্য হাদিস শরীফে আছে (খাইরুন নাস মান এয়ানফাউন নাস) তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো মানুষ সে যে আল্লাহর বান্দাদের উপকার করে

মানব সেবা করা ছিল, মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়া ছিল আমাদের প্রিয় নবীজির একটি গুণ তিনি নবুয়াত লাভের আগেও মানব সেবা করতেন, মানুষের বিপদে আপদে পাশে দাড়াতেন, বুখারী শরীফের নং হাদিসের বর্ণনায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়, তিনি যখন হেরা গুহা থেকে প্রথম অহি নিয়ে আসেন, তখন হযরত খাদিজাকে (রা) বলেন

 " لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي "

(আমি আমার প্রাণের ভয় করছি)

 فَقَالَتْ خَدِيجَةُ كَلاَّ وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ‏.

খাদীজা (রাঃ) বললেন, আল্লাহ্‌র কসম, কক্ষনো না। আল্লাহ্ আপনাকে কক্ষনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।

সুতরাং এই হাদীস এর মাধ্যমে জানা যায় আমাদের দয়াল নবী নবুয়াতের আগেও মানব সেবা করতেন, অসহায়দের পাশে দাঁড়াতেন, মানুষের বিপদে ঝাপিয়ে পড়তেননবীজি মক্কার যুবকদেরকে নিয়ে হিলফুল ফুযুল সংগঠনও করেছেন, শুধুমাত্র মানব সেবার নিয়তে। সুতরাং আমার সকল মুসলমান ভাইদের প্রতি অনুরোধ বিশেষ করে যারা যুবক আছেন ১৮ বছর থেকে ৫০ বছরের ভিতর বয়সীরা আছেন তারা অন্যের বিপদে ঝাপিয়ে পড়ার কাজটি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে করবেন এটা অনেক বড় একটি নববী সুন্নত  আল্লাহর প্রিয় হাবিব () এরশাদ করেন (এরহামু মান ফিল আরদি, এয়ারহামুকুম মান ফিস সামা) তুমি যদি জমিনওয়ালাদের উপর দয়া কর তাহলে আসমান ওয়ালা তোমাদের উপর দয়া করবেন রহমত নাজিল করবেন

হযরত মুসা () যখন হিজরত করছিলেন, তখন মনের মধ্যে ভয় ছিল, সে জন্য চলার পথে বার বার পিছনে ফিরে ফিরে দেখতেন, আর বার বার দোয়া করছিলেন (রাব্বি নাজ্জিনি মিনাল কওমিল জলিমিন) অর্থ্যাৎ হে আল্লাহ আমাকে জালেমদের হাত থেকে মুক্তি দান কর মুসা () মাদায়েনের দিকে রওয়ানা হলেন, একেবারে নিঃস্ব, ঘর নাই, বাড়ী নাই, টাকা নাই পয়সা, খাদ্য নাই পানি নাই, সফর করতে করতে মাদায়েনে গিয়ে একটি কুয়ার পাশে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, সেখানে বসে বসে তিনি দোয়া করলেন (রব্বি ইন্নি লিমা আনজালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফকির), (হে আল্লাহ যে নেয়ামত আপনি আমাকে দান করেছেন আমি তার মুখাপেক্ষি) এর মধ্যে কিছু রাখাল এসে কুয়া থেকে পানি নিয়ে তাদের বকরিকে পান করানোর পর কুয়ার মুখে বিশাল ভারি পাথর রেখে কুয়ার মুখ বন্ধ করে চলে গেল, তখন ছোট ছোট দুজন মেয়ে আসল তাদের বকরিকে পানি পান করানোর জন্য, কিন্তু কুয়ার মুখের পাথরটি অনেক চেষ্টা করেও তারা সরাতে ব্যর্থ হল, তখন মুসা () দেখে নিজে উঠে সে পাথরটি সরিয়ে দিল, আর কুয়া থেকে পানি তুলে সে মেয়ে দুটির বকরিকে পানি পান করিয়ে দিলেন এটাই হল মানবতা, যখনই দেখবেন কারো সাহায্যের প্রয়োজন, সে সাহায্য না চাইলেও তার সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার নামই হল মানবতা এই দুজন মেয়ে ছিল হযরত শোয়াইব () এর মেয়ে, মেয়ে দুটি ঘরে গিয়ে হযরত শোয়াইব () কে সব বললেন, আর শোয়াইব () মেয়েদের পাঠালেন সে মুসাফির হযরত মুসা কে ডেকে আনতে, হযরত মুসাকে হযরত শোয়াইব () আশ্রয় দিলেন, থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন, আর পরবর্তীতে সে ঘরেই হযরত মুসা () এর বিবাহ হয় যে মুসা () এর কোন ঘর বাড়ী, আত্মিয় স্বজন, খাদ্য পানি ছিলনা সে মুসা () কে আল্লাহ তায়ালা সবকিছু মুহুর্তের মধ্যে ব্যবস্থা করে দিলেন কিসের বিনিময়ে? পরোপকার, মানব সেবা, অসহায়কে সাহায্য করার কারনে, দূর্বলকে সহযোগিতার কারনে, মানবতা দেখানোর কারনেআমাদেরও উচিত আল্লাহর ওয়াস্তে মানুষের খেদমত করা, মানুষের কল্যাণে ঝাপিয়ে পড়া, মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো তাহলে আল্লাহ তায়ালা মুসা () এর মত আমাদেরকেও সব কিছু দান করবেন ইনশা আল্লাহআর মুসা () যে দোয়া পড়েছেন সে দোয়াটি বেশী বেশী পড়বেন (রব্বি ইন্নি লিমা আনজালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফকির) আল্লাহর নবী বলেন

وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى عَوْنِ أَخِيهِ

আর আল্লাহ তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেন যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে। সুতরাং সদা সবদা আল্লাহর সাহায্য লাভের জন্য মুসলমান ভায়ের সাহায্যে এগিয়ে থাকতে হবে।

মানব কল্যাণমুলক কয়েকটি কাজের উদাহারণ দিচ্ছি যা আপনাদের কাজে লাগবে

# ব্যবসায়ীরা বিক্রীত মাল ফেরত নেয়া # ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করা হল মানব কল্যানের শ্রেষ্ঠ আমল (বুখারী ১২)

# এতিম পালন করা- সামর্থ্যবানরা অন্তত একজন এতিমের দায়িত্ব নিবেন, অথবা যে সব মাদরাসা আছে সেখানে খোঁজ নিবেন যারা এতিম আছে তাদের থেকে যে কোন একজনের দায়িত্ব নিবেন, আপনার সন্তানকে যেভাবে লালন পালন করেন সে এতিমকেও সেভাবে দেকাশুনা করবেন, আপনার সন্তান মনে করে তার সকল প্রয়োজন পুরন করার চেষ্টা করবেন

হাদিস: মহানবী (সা.) এরশাদ করেছেন, মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়। এরপর তিনি তাঁর আঙুলের মাধ্যমে বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব।’ (ইবনে মাজাহ)

# শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন মাস পুরানোর ১ দিন আগে দিয়ে দিবেন: হাদিসে কুদসিতে আছে- আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তাদের বিরুদ্ধে থাকব, যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে, মানুষকে বিক্রি করে এবং ওই ব্যক্তি যে কাউকে কাজে নিয়োগ করল, অতঃপর সে তার কাজ পুরোটা করল; কিন্তু সে তার ন্যায্য মজুরি দিল না’ (বুখারি)।

# অসুস্থকে দেখতে যাওয়া, সেবা করা :হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে... । -সুনানে তিরমিজি: ৯৬৭

# করজে হাসানা দেয়া- নিঃশত ঋণ দেয়া

مَّن ذَا الَّذِي يُقْرِضُ اللّهَ قَرْضًا حَسَنًا فَيُضَاعِفَهُ لَهُ أَضْعَافًا كَثِيرَةً

এমন কে আছে যে, আল্লাহকে করজ দেবে, উত্তম করজ; অতঃপর আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ-বহু গুণ বৃদ্ধি করে দিবেন। [সুরা বাকারা - ২:২৪৫]

এ ধরনের আরো অনেক আমল আছে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন আমিন

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.