শীতের ৭টি বিশেষ আমল
শীতের ৭টি বিশেষ
আমল
ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (রহ) বলেন শীতকালে এবাদত করা সহজ, রোজা রাখা সহজ, দীর্ঘ রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ পড়াও সহজ তাই
নবী করিম (দ) শীতকালকে এবাদতের বসন্তকাল বলে ঘোষনা করেছেন। অপর হাদিসে আছে নবী করিম (দ) এরশাদ করেন
আমি কি তোমাদেরকে শীতকালীন গনিমতের ব্যপারে সঠিক তথ্য দিবনা? অন্যরা বললেন হ্যাঁ। তখন আবু হুরায়রা (রা) বলেন তা হল শীতকালিন রোজা।
হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন শীতকাল মুমিনের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত কারন শীতকালে এবাদতের জন্য দীর্ঘ রাত ও রোজা রাখার জন্য ছোট দিন আছে।
শীতকালের আমলের ব্যপারে বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত ওবাইদ বিন ওমায়র লাইছি (রহ) বলেন- হে আহলে কুরআন শীতকালে দীর্ঘ রাতে তোমরা কুরআন তেলাওয়াত কর আর ছোট্ট দিনে রোজা রাখ।
হজরত আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রাসূল সা: ফরমাইয়েছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয় ভাগ অবশিষ্ট থাকে
তিনি তখন বলতে থাকেন- কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব?
কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? (বুখারি ও মুসলিম।
গ্রীষ্মে যারা রাত ছোট হওয়ার কারনে শেষ রাতে উঠতে পারেন না তারা শীতকালে এই সুযোগটি গ্রহণ করতে পারেন, শেষ রাতে আল্লাহর কাছ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত হাছিল করতে পারেন
শীতকালিন রাতে দীর্ঘসময় কুরআন তেলাওয়াত করাও একটি অসাধারণ এবাদত- রাতে কোরআন তেলাওয়াত করলে রহমতের ফেরেশতারা নেমে আসেন
এমনি এক ঘটনা আছে ইসলামের ইতিহাসে। মদিনায় আল্লাহর রাসুলের সাহাবি উসাইদ ইবনে হুদাইর (রা.) এক রাতের নির্জনতায় সুরা বাকারা তেলাওয়াতে মগ্ন ছিলেন।
অদূরেই বাঁধা ছিল তার ঘোড়া। হঠাৎই ঘোড়াটা অস্থির আচরণ শুরু করল! তেলাওয়াতের সময় ঘোড়াটি লাফাতে থাকে। তেলাওয়াত বন্ধ করলে ঘোড়াটিও থেমে যায়।
আবার তেলাওয়াত শুরু করলে ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করে। তার ছেলে ইয়াহইয়া নিকটেই শুয়ে ছিল। তিনি ভীত হয়ে পড়লেন এই কথা চিন্তা করে যে,
এমনটি চলতে থাকলে ছেলেটি ঘোড়ার পায়ে পিষে মারা যেতে পারে। তৃতীয়বারের মাথায় তিনি বাইরে এসে দেখেন, আকাশ থেকে ভুপৃষ্ট পর্যন্ত একটি প্রলম্বিত উজ্জ্বল জ্যোতির আভা।
তার তেলাওয়াত শেষ হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতেই আলোটি অদৃশ্য হয়ে যায়। সকালে নবীকে (সা.) বিস্তারিত খুলে বললেন।
নবীজি (সা.) বললেন, উসাইদ! তুমি কি জান, ওটা কী ছিল? জবাবে সাহাবি না সূচক উত্তর দিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, তারা ছিল ফেরেশতা।
তোমার তেলাওয়াত শুনে কাছে এসেছিল। তুমি যদি তেলাওয়াত করতে থাকতে, তারাও সকাল পর্যন্ত থেকে যেত, অদৃশ্য হতে পারত না।
লোকেরা তাদেরকে দিনের আলোতে দেখতে পেত। (বুখারি : ২/৭৫০; সুবহানাল্লাহ! কতবড় নেয়ামত আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন।
তারপর যারা সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতে চান কিন্তু পারেন না তাদের জন্যও শীতকালে এই সুযোগ রয়েছে আর সোমবার ও বৃস্পতিবার হল সপ্তাহের অন্যতম বরকতময় দিন
এই দিনে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে উত্থাপিত হয়, এই দিনগুলোতে জান্নাতের দরজা খোলা হয়। অনেক বান্দাকে ক্ষমা করা হয়।
তাই মুমিনের উচিত নবীজি (সা.)-এর দেখানো পদ্ধতিতে সপ্তাহের এই দিনগুলোর মূল্যায়ন করা। এই দিনগুলোর ফজিলত সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন
প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার (আল্লাহ তাআলার দরবারে) আমল পেশ করা হয়। যারা গ্রীস্মকালে এই সুযোগ লাভ করতে পারেননি তারা শীতকালে এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না
বিশেষ করে মহিলারা গ্রীষ্মকালীন লম্বা দিনের কারনে তাদের রমজানের যে রোজার কাজা থাকে তা পালন করতে পারেন না, তারাও শীতকালে সে সব কাজা রোজা আদায় করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন
সোম ও বৃহস্পতি বারের রোজা, মহিলাদের কাজা রোজা ছাড়াও আরো ৩টি রোজা আছে যাকে আইয়্যামে বীজের রোজা বলে, শীতকালে চন্দ্র মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখের রোজার সুযোগও গ্রহণ করবেন
যারা এই আইয়্যামে বীজের রোজা রাখে তারা সারা বছর রোজা পালন করার ছাওয়াব লাভ করতে পারে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শীতকালিন মৌসুমকে এবাদতের মৌসুক হিসেবে উৎযাপন করার তৌফিক দান করুন আমিন
কিয়ামুল লাইল, তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলাওয়াত, আইয়ামে বিজের রোজা, সোম ও বৃহস্পতিবারের রোজা, মহিলাদের কাজা রোজা
এবং ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করার মাধ্যমে এ শীতকালকে উৎযাপন করার তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই