সুরা ফাতেহার আশ্চর্য্য শক্তিধর ওজিফা। বড় বড় বিপদ ও সকল সমস্যা সমাধানে সুরা ফাতেহার আমল।

 


রজব মাস খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ) এর ওফাতের মাস, এই মাসে খাজা সাহেব এর খলিফা কুতুব উদ্দীন বকতিয়ার কাকির একটি অলৌকিক ঘটনা

উনার জানাযার আশ্চর্য্যজনক ঘটনা এবং সাথে সাথে খাজা সাহেব এর সুরা ফাতেহর ১টি জবরদস্ত পরিক্ষিত ওজিফা বলব যে ওজিফাটি

তিনি সকল বড় বড় বিপদ, পেরেশানিতে, যে কোন সমস্যায় নিজেও আমল করতেন এবং সকলকে শিক্ষা দিতেন, ওজিফাটি কিভাবে পড়বেন

কতবার পড়বেন কখন পড়বেন বিস্তারিত জানাব, আজকের আলোচনাটি খুবই তথ্যবহুল শিক্ষনীয়

এবং আপনাদের জন্য খুবই উপকারী হবে। তাই নিজেও শুনবেন আর অন্যদেরকে শেয়ার করবেন।  

খাজা কুতুব উদ্দীন বকতিয়ার কাকি (রহ) এত উচ্চ মর্যাদার কামেল পীর ছিলেন যে দীল্লির বাদশাও সুলতান শামসুদ্দিন আলতামাশ তাঁর মুরিদ হয়ে যান

খাজা কুতুব উদ্দীন বকতিয়ার কাকির পীর ছিলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি আজমিরি (রহ) হযরত কুতুব উদ্দীন মৃত্যুর আগে ৩টি শর্ত পুরন করে জানাযার ইমামতি করার অছিয়ত করেন

তিনি বলেন- আমার ইন্তেকালের পর জানাযা সে পড়াবে () যে তওবার পর আর কখনো হারাম কাজের চিন্তাও করেনি,

() জীবনে হারাম খাদ্য গ্রহণ করেনি, এবং () যার জীবনে তাহাজ্জুদের নামাজ কাজা হয়নি

জানাযার নামাজ পড়ানোর জন্য সেখানে অনেক বড় বড় আলেম ছিল কিন্তু কেহ হযরত কুতুবউদ্দীনের জানাযা পড়াতে সাহস করলেন না।

কেহ যখন অগ্রসর হচ্ছেনা তখন দিল্লির বাদশা পীর কুতুব উদ্দীনের জানাযা পড়ানোর জন্য এগিয়ে গেলেন, আর বললেন

ওহে আমার পীর সারা জীবন আমি গোপনে এবাদত করে গেছি আর আপনি যাওয়ার সময় আমার গোপনীতা ফাঁস করে চলে গেলেন

এযুগেও আল্লাহ ওয়ালাদের উপর মিথ্যা অপবাদ লাগতে থাকে, সে যুগেও আল্লাহ ওয়ালাদের উপর অপবাদ লাগত, কুতুব উদ্দীন বকতিয়ার কাকির উপরও এক জঘন্য অপবাদ আরোপ করা হয়

দিল্লির বাদশা নিজের পীরের পরামর্শক্রমে রাজ্য শাসন করছিলেন, ফলে ইসলামের প্রচার প্রসার বৃদ্ধি পেতে থাকে, আর এটা হিন্দুদের কাছে সহ্য হলোনা

তারা কিছু মুসলমানকে কিনে নিল, একদিন দিল্লির বাদশা দরবারে বসা ছিলেন, দরবারে কাজীও বসা ছিলেন, এমন সময় দরবারের বাহিরে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনা গেল

চিৎকার শুনে বাদশা হকুম দিলেন বাহিরে যে চিৎকার করছেন তাকে দরবারে নিয়ে আস, এক মহিলাকে নিয়ে আসা হল যার কোলে মাসের বাচ্চা

মহিলা এসেই রাজ দরবারে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিল, বাদশা প্রশ্ন করল কি হয়েছে? মহিলা বলল বাদশা আমার ইজ্জতের সাথে তামাশা করা হয়েছে

আর তার ফসল হল এই মাসের বাচ্চা, বাদশা প্রশ্ন করেন কে তোমার এই সর্বনাশ করেছে? মহিলা বলে আমি বলতে পারবনা কারন বললেও আপনার সে সৎ সাহস নাই তার বিচার করার

বাদশা বললেন তুমি বলে দেখ আমি বিচার করি কিনা? তখন মহিলা বলল বাদশা আপনার পীর কুতুব উদ্দীন বকতিয়ারকাকি আমার এই সর্বনাশ করেছেন নাউজুবিল্লাহ

কথা শুনেই বাদশার হুশ উড়ে গেল, বাদশা মনে মনে বলতে লাগলেন- হে আল্লাহ যে পীরের সংস্পর্শে আমি আজ এত এবাদতগুজার হলাম সে পীরের ব্যপারে এমন কথা শুনার আগে কেয়ামত কেন হয়ে গেলনা?

হে আল্লাহ তুমি আমাকে এত বড় পরীক্ষায় ফেললে? আমি কিভাবে এই বিষয়ে ফয়সালা করব? বাদশা থর থর করে কাপতে লাগলেন, হে আল্লাহ এমন পরিস্থিতির সম্মুখিন হওয়ার আগে আমার মৃত্যু কেন হলোনা?

বাদশা বললেন- হে রমনী তুমি জবান সামলে কথা বল, তখন রমনী বলে বাদশা আমি আগেই বলেছিলাম, আপনার মধ্যে সৎ সাহস নাই, আমার ইজ্জত লুন্ঠিত হয়ে গেছে আর আপনি নিজের পীর বাঁচাচ্ছেন?

বাদশা একান্ত অপারগ হয়ে কুতুব উদ্দীন বকতিয়ার কাকিকে দরবারে ডাকলেন, কুতুবউদ্দীন লাঠিতে ভর করে করে দরবারে উপস্থিত হয়ে গেলেন

দিল্লির পীর আজ অপরাধীর বেঁশে বিচারের কাটগড়ায়, মহিলার পক্ষে জন মিথ্যা স্বাক্ষ্যদানকারীও সেখানে উপস্থিত ছিল, তারা পীর সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষিও দিয়ে দিল, শুধু কয়েকটি নোটের লোভে

এমন অবস্থায় কুতুব উদ্দীন বকতেয়ার কাকী কাজীর দরবার থেকে দিনের সময় চাইলেন, তাকে সময় দেয়া হল, তিনি চলে গেলেন নিজের ঘরে

যখন রাত গভির হল, রাতে উঠে জায়নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন, তাহাজ্জুদ পড়ে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলেন, আর মনে মনে নিজের পির খাজা আজমিরিকে স্মরণ করলেন

এক সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে তিনি স্বপ্ন দেখলেন কুতুব উদ্দীন তুমি পেরেশান হইও না, তুমি বে ওয়ারিশ নও, আমি আসছি। ৩য় দিন সুর্য ডুবে গেল মাগরিবের নামাজের সালাম ফিরিয়ে দেখেন

হযরত মঈনুদ্দীন চিশতি পিছনে নামাজের কাতারে নামাজ পড়ছেন, পরের দিন সকালে বাদশার দরবারে ফয়সালা হবে,

খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতি নিজের মুরিদ কুতুব উদ্দীনকে নিয়ে রাজ দরবারে উপস্থিত হয়ে গেলেন, দরবারে মিথ্যাবাদী নারী মিথ্যা স্বাক্ষদানকারীরা উপস্থিত

আর এই বিচার কার্য্য দেখার জন্য হাজার হাজার দর্শকও উপস্থিত, খাজা গরীবে নেওয়াজ সে মহিলার কোলের মাসের সন্তানকে সম্নোধন করে বলেন হে বাচ্চা তুমিই বল তোমার আসল পিতা কে?

রাজ দরবারের সকলে খাজা সাহেব এর এমন কান্ড দেখে হতবাক, বিচারক প্রশ্ন করেন মাসের বাচ্চাকি কথা বলতে পারবে? তখন খাজা সাহেব জবাব দিলেন

আল্লাহ তার নবী ইউসুফ () এর পক্ষে দোলনার শিশুর দ্বারা কথা বলিয়েছেন, আল্লাহ মরিয়ম () এর জন্য নবজাতক শিশু হযরত ঈসাকে কথা বলিয়েছেন

সে আল্লাহই আজ আমার মুরিদ কুতুব উদ্দীন এর ইজ্জতের খাতিরে এই মাসের বাচ্চার জনাব খুলে দিবেন, এই কথা বলার দেরি সাথে সাথে সে বাচ্চাটি বলে উঠল

হুজুর আসসালামু আলাইকুম! আমার আসল বাবা হলেন কাজী সাহেব এর পাশে যে হিন্দু সরদার বসে আছেন তিনি, আর এই জন সাক্ষি হল টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষিদাতা

আর এই মিথ্যা ঘটনা সাজানোতে এই কাজি সাহেবও জড়িত আছেন, হযরত কুতুব উদ্দীন বকতেয়ার কাকি সম্পূর্ণ নির্দোষ কথা বলেই সে বাচ্চাটি চুপ হয়ে গেল। সুবহানাল্লাহ

সেদিন এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেক অমুসলিম কলমা পড়ে   মুসলমান হয়ে গেল। আল্লাহু আকবর কবিরা
 আলা ইন্না আউলিয়া-আল্লাহি লা খাউফুন আলাইহিম ওয়া-লা হুম ইয়াহযানুন

অর্থ: জেনে রাখ ! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলিগণের(বন্ধুগণের) নেই কোন ভয় এবং না আছে কোন দু: (দুশচিন্তা)
(সূরা ইউনুস, আয়াত-৬২)

আসুন শপথ করি, আমরা সব ধরনের গুনাহের কাজ ছেড়ে দিব, সকল হারাম থেকে বেঁচে থাকব এবং ওয়াক্ত নামাজ তাহজ্জুদের পাবন্দি করব। ইনশা আল্লাহ

এবার আসুন খাজা মুঈনুদ্দিন চিশতির সুরা ফাতেহাকে কেন এত ভালোবাসতেন, কেন সকলকে এই সুরা ফাতেহার ওজিফা দিতেন

কেন যে কোন পেরেশানিতে যে কোন মসিবতে বিপদে এই সুরা ফাতেহার ওজিফার কথা বলতেন, তা জেনে নিই।

হযরত ওসমান হারুনি হলেন খাজা মঈনুদ্দিন চিশতির পীর, একবার হযরত ওসমান হারুনির সাথে খাজা সাহেব সফরে বের হলেন পথে নদী,

এখন নদী পার হওয়ার জন্য কোন নৌকা সেখানে ছিলনা, হযরত ওসমান হারুনি খাজা মঈনুদ্দিন চিশতিকে চোখ বন্ধ করতে বললেন,

আর ওসমান হারুনি মুঈনুদ্দিনকে হাত ধরে হাটতে লাগলেন কিছুক্ষণ হাটার পর বললেন চোখ খুল,

চোখ খুলে দেখেন নদী পা হয়ে গেছেন, এমন আশ্চর্য্য ঘটনা দেখে খাজা সাহেব নিজের পীরকে প্রশ্ন করলেন

হুজুর আপনি কি ওজিফা করেছেন আমাকেবলুন, তখন খাজা ওসমান হারুনি বলেন আমি মাত্র বার সুরা ফাতিহা পড়েছি

আর তার বরকতেই আল্লাহ আমাদের জন্য এই নদীর মাঝে রাস্তা তৈরী করে দিলেন সুবহানাল্লাহ।

আর সেদিন থেকে যে কোন মসিবতে বিপদে প্রয়োজনে খাজা সাহেব বার সুরা ফাতেহা পড়েন আর যে কোন বিপদগ্রস্থকে এই সুরা ফাতেহা বার পড়ার নির্দেশ দিতেন

আর পড়ার নিয়ম হল বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিমিল হামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন

এভাবে বিসমিল্লাহর সাথে মিলিয়ে পড়তে হবে। আপনিও যে কোন সমস্যায় একই নিয়মে বার সুরা ফাতেহা পড়বেন

ইনশা আল্লাহ আল্লাহ আপনার সমস্যা সমাধান করে দিবেন। বিপদ থেকে উদ্ধারের রাস্তা বের করে দিবেন
আল্লাহ তায়ালা  সকল বুযুর্গানে দ্বীনের রুহানি ফয়েজ আমাদেরকে দান করুন আমিন।

 


কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.