হিরার টুকরা হতে চাইলে ৩ খলিফার বিখ্যাত আমলটি শিখুন। জীবনের মোড় ঘুরে যাবে
হিরার টুকরা হতে
চাইলে ৩ খলিফার বিখ্যাত আমলটি শিখুন। জীবনের মোড় ঘুরে যাবে
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় বন্ধুরা আজকে খলিফাতুল মুসলিমিনদের একটি আযব আমল
বর্ননা করব
এত চমৎকার আমলটি যা জানার পর আপনার জীবনের মোড় ঘুরে যাবে। আজকের আমলটি অত্যন্ত
চমৎকার হাদিস ও গল্পের মাধ্যমে শিখাবো ইনশা আল্লাহ
আল্লাহর রাসূল (সা:) যখন রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিলেন তখন তিনি
রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহারে জন্য ১টি সিল ব্যবহার করতেন, আর সে সিলে লেখা ছিল মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ডে নবীজি এই আংটি দিয়ে সিল মোহর লাগাতেন।
আবার সহিহ বুখারী শরীফের ৬৫ নং হাদিসের বর্ণনা, নবীজি (দ) যখন রোমবাসী ও অনারবদের কাছে চিঠি পাঠানোর মনস্থ
করলেন তখন তাঁকে বলা হল যে, তারা (রোমবাসী ও অনারবরা) সীল মোহরযুক্ত ছাড়া
কোন পত্র পড়ে না।
এরপর তিনি রূপার একটি আংটি (মোহর) তৈরী করালেন যার নকশা ছিল (مُحَمَّدٌ
رَسُولُ
اللَّهِ)
বুখারী শরীফের ৫৮৬৬ নং হাদিস পড়ি তাতে জানা যায় খলিফাতুল মুসলিমনরাও নবীজির
নামের সিল মোহরটা ব্যবহার করতেন হাদিসটি হল ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণের একটি আংটি পরিধান করেন।
আংটির মোহর হাতের তালুর ভিতরের দিকে ফিরিয়ে রাখেন। তাতে তিনি مُحَمَّدٌ
رَسُولُ
اللَّهِ খোদাই
করেছিলেন।
লোকেরাও (নবীজির অনুসরনে) অনুরূপ আংটি ব্যবহার করতে আরম্ভ করেন। যখন তিনি দেখলেন যে, তারাও অনুরূপ আংটি ব্যবহার করছে, তখন তিনি তা ছুড়ে ফেলেন এবং বলেন কখনও এটি
ব্যবহার করব না। এরপর একটি রূপার আংটি ব্যবহার করেন।লোকেরাও রূপার আংটি ব্যবহার আরম্ভ
করে।
ইবনু উমর (রাঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরে আবূ বকর
(রাঃ), তারপর উমর (রাঃ) ও তারপর উসমান (রাঃ) তা ব্যবহার করেছেন।
শেষে উসমান (রাঃ) এর (হাত) থেকে আংটিটি ’আরীস’ নামক কূপের মধ্যে পড়ে যায়। উসমান (রা) এর হাত থেকে এই আংটিটি
আরিস নামক কুপে পরে যাওয়ার আগে এক আযিব ঘটনা আছে যা বুখারীর ৩৬৭৪ নং হাদিসে আছে আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) বর্ণিত যে, তিনি একদিন ঘরে উযূ করে বের হলেন এবং (মনে মনে স্থির করলেন)
আমি আজ সারাদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কাটাব, তার থেকে পৃথক হব না। তিনি মসজিদে
গিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খবর নিলেন, সাহাবীগণ বললেন, তিনি এদিকে বেরিয়ে গেছেন। আমিও ঐ পথ
ধরে তাঁর অনুগমন করলাম। তাঁর খুঁজে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম।
তিনি শেষ পর্যন্ত আরীস কূপের নিকট গিয়ে পৌছলেন। আমি (কূপে প্রবেশের) দরজার নিকট
বসে পড়লাম। দরজাটি খেজুরের শাখা দিয়ে তৈরী ছিল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর প্রয়োজন (ইস্তিঞ্জা)
সেরে উযূ করলেন। তখন আমি তাঁর নিকটে দাঁড়ালাম এবং দেখতে পেলাম তিনি আরীস কূপের কিনারার
বাঁধের মাঝখানে বসে হাঁটু পর্যন্ত পা দু’টি খুলে কূপের ভিতরে ঝুলিয়ে রেখেছেন, আমি তাঁকে সালাম দিলাম এবং ফিরে এসে
দরজায় বসে রইলাম এবং মনে মনে স্থির করে নিলাম যে, আজ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর দারোয়ানরূপে (পাহারাদারের) দায়িত্ব পালন করব।
এ সময় আবূ বকর (রাঃ) এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কে? তিনি বললেন, আবূ বকর! আমি বললাম থামুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি) আমি গিয়ে বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আবূ বকর (রাঃ)
ভিতরে আসার অনুমতি চাচ্ছেন। তিনি বললেন, ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।
আমি ফিরে এসে আবূ বকর (রাঃ) কে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন।
আবূ বকর (রাঃ) ভিতরে আসলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
ডানপাশে কূপের কিনারায় বসে দু’পায়ের কাপড় হাটু পর্যন্ত উঠায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ন্যায়
কূপের ভিতর ভাগে পা ঝুলিয়ে দিয়ে বসে পড়েন। আমি ফিরে এসে (দরজার পাশে) বসে পড়লাম।
আমি (ঘর হতে বের হওয়ার সময়) আমার ভাইকে উযূ করছে অবস্থায় রেখে এসেছিলাম। তারও
আমার সাথে মিলিত হওয়ার কথা ছিল।
তাই আমি (মনে মনে) বলতে লাগলাম, আল্লাহ যদি তার (ভাইয়ের) মঙ্গল চান তবে তাকে নিয়ে আসুন।
এমন সময় এক ব্যাক্তি দরজা নাড়তে লাগল। আমি বললাম, কে? তিনি বললেন, আমি উমর ইবনু খাত্তাব। আমি বললাম, অপেক্ষা করুন, (আমি আপনার জন্য অনুমতি নিয়ে আসি)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খেদমতে সালাম পেশ করে আরয
করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! উমর ইবনু খাত্তাব (ভিতরে আসার) অনুমতি চাচ্ছেন।
তিনি বললেন তাকে ভিতরে আসার অনুমতি দাও এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও। আমি
এসে তাকে বললাম, ভিতরে আসুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের
সুসংবাদ দিচ্ছেন। তিনি ভিতরে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম এর বামপাশে হাটু পর্যন্ত কাপড় উঠিয়ে কূপের ভিতর দিকে পা ঝুলিয়ে দিয়ে
বসে গেলেন।
আমি আবার ফিরে আসলাম এবং বলতে থাকলাম আল্লাহ যদি আমার
ভাইয়ের মঙ্গল চান, তবে যেন তাকে নিয়ে আসেন। এরপর আর এক ব্যাক্তি এসে দরজা নাড়তে লাগল। আমি জিজ্ঞাসা
করলাম কে? তিনি বললেন, আমি উসমান ইবনু আফফান। আমি বললাম, থামুন (আমি অনুমতি নিয়ে আসছি) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর খেদমতে দিয়ে জানালাম। তিনি বললেন, তাকে ভিতরে আসতে বল এবং তাকেও জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়ে দাও।
তবে (দুনিয়াতে তার উপর) কঠিন পরীক্ষা হবে। আমি এসে বললাম, ভিতরে আসুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিচ্ছেন; তবে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে।
তিনি ভিতরে এসে দেখলেন, কূপের কিনারায় খালি জায়গা নাই। তাই তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মুখে কুপের অপর প্রান্তে বসে পড়লেন।
এর পরের ঘটনা বুখারীর ৫৮৭৮-৫৮৭৯ নং হাদিসে আছে ইমাম বুখারী বলেন আহমাদের সূত্রে আনাস (রাঃ) থেকে এ কথা অতিরিক্ত বর্ণিত আছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আংটি (তার জীবদ্দশায়) তার হাতেই ছিল।
তার (ইন্তেকালের) পরে তা আবূ বকর (রাঃ) এর হাতে থাকে আবূ বকর (রাঃ) এর (ইন্তেকালের) পরে
তা উমার (রাঃ) এর হাতে থাকে। যখন উসমান (রাঃ) এর আমল এল, তখন (একদিন) তিনি ঐ আংটি হাতে নিয়ে আরীস নামক কুপের উপর
বসেন।
আংটিটি বের করে নাড়চাড়া করছিলেন। হঠাৎ তা (কুপের মধ্যে) পড়ে যায়। আনাস (রাঃ)
বলেন, আমরা তিন দিন যাবত উসমানের (রাঃ) সাথে আংটিটি অনুসন্ধান চালালাম কূপের পানি ফেলে দেয়া হল কিন্তু আংটি আর
আমরা পেলাম না।
আর নবীজি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন উসমান (রা) কঠিন পরীক্ষার সম্মুখিন হবেন, আর আবু দাউদ এর ৪২১৮ নং হাদিসে আছে উসমান (রাঃ)-এর হাত থেকে আংটিটি পড়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত
লোকেরা তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়নি আশ্চর্য্যের বিষয় হল উসমান (রা) এর ব্যপারে নবীজি যে কুপের
পারে বসে ভবিষ্যৎবানী করেছেন সে কুপেই আংটিটি পরে গেল
আর তার পর থেকেই হযরত উসমান (রা) এর উপর পরীক্ষা শুরু হয়ে গেল, নানামুখি সমস্যা ও বিপর্যয় আসা আরম্ভ হল।
এরপর খোলাফায়ে রাশেদিনের আংটির ঘটনাটি প্রসিদ্ধ যাতে কিছু শিক্ষা আছে যেমন রাসূলাল্লাহ (সা:) এর ইন্তেকালের পর আবু বকর (রা:) রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে শপথ নিলেন। তখন তার নামেও সিলমোহর
বানানোর প্রয়োজন পড়লো।
কিন্তু আবু বকর (রা:) কোনোভাবেই নিজের নামে সিলমোহর বানানোর সাহস পেলেন না।
তিনি বললেন, কাগজের পাতায় পাতায় আমার নামে সিল থাকবে, হাশরের মাঠে আল্লাহ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে তোর নাম এতো জায়গায় লেখা
ছিল কেন? তখন আমি কি জবাব দিবো?
এই কথা শুনে সাহাবীরা বললেন যে তাহলে 'খলীফাতুল মুসলিমিন অর্থাৎ 'মুসলমানদের প্রেসিডেন্ট' এই নামে সিলমোহর বানানো হোক।
কিন্তু তবুও আবুবকর (রা:) রাজি হলেন না। তিনি বললেন যে আমি তো নিজেকে একজন
সাধারণ আসামি ব্যতীত অন্য কিছু ভাবিনা, তাই আমার নামের সাথে খলিফা লেখা যাবেনা। কিন্তু বিদেশী
রাষ্ট্রের সাথে চিঠি আদান প্রদানের জন্য তো সিলমোহর লাগবেই, তাই আবু বকর (রা:) তার সিলমোহর
লিখলেন ' কুলিল খাইরা' যার অর্থ 'কথা বললে ভালো কথা বলো, মন্দ কথা বলোনা''।
হজরত আবু বকর (রা:)-এর মৃত্যুর পর যখন হজরত ওমার (রা:) খলিফা হিসেবে দায়িত্ত
নিলেন তখন তিনিও নিজের নামে সিলমোহর বানান নি।
তার সিলমোহর লেখা ছিল 'কাফা বিল মউতি ওয়া ইজান' অর্থাৎ ''সব সময় তোমার মৃত্যুর কথা স্মরণ করো''।
হজরত ওমার (রা:)-এর মৃত্যুর পর যখন হজরত ওসমান (রা:)খলিফা হিসেবে দায়িত্ত
নিলেন তখন তিনিও নিজের নামে সিলমোহর বানানোর সাহস দেখান নি।
তার সিলমোহর লেখা ছিল 'মিন হুসনি ইসলামিল মারিই তরকুহূ মালা এয়ানি' অর্থাৎ '' ওই সমস্ত জিনিস বর্জন কর যেই
জিনিসের কোনো প্রয়োজন নেই''।
৩ খলিফার মুল সিল ছিল নবীজির মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর সে সিল আর তার নিচে কোনটি কার
যুগের ডকুমেন্ট বুঝতে পারার জন্য আবু বকর (রা) কুলিল খায়র, ওমর
(রা) (কাফা বিল মওতি ওয়াইজান) ওসমান (রা) 'মিন হুসনি ইসলামিল মারিই তরকুহূ মালা এয়ানি‘ ব্যবহার করেছেন অথচ আবু বকর জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত,
ওমর জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত, উসমানও
জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত তবুও তারা নিজেদের নামের সিল বানাতে সাহস করেননি আর আমরা
দেখি অনেক লোক হজ্বও ওমরা করেই নিজের নামের আগে আলহাজ্ব লাগিয়ে দেয় অনেক মাহফিলের
পোস্টারে নাম উপরে কেন নিচে কেন? নাম চিকন করে লিখল কেন এসব
নিয়ে বক্তাদের বাড়াবাড়ি
আর শ্রেষ্ঠ মানুষগুলির চরিত্র হল তারা নিজেদেরকে সদা ছোট করে প্রকাশ করত, পদ পদবীর লোভ নিজের নামের প্রচারের লোভ তাদের মধ্যে ছিলনা তাই
তারা ছিল সোনালি মানুষ তাদের যুগ ছিল সোনিল, আজো আমরা যদি তাদের
মত হতে পারি আমরাও সোনালি মানুষ হতে পারি
হে আল্লাহ! আমাদেরকে আমাদের দেশের প্রশাসনের লোকগুলিকে আমাদের সন্তান
সন্তুতিকে সোনালি মানুষ বানিয়ে দাও আমিন
কোন মন্তব্য নেই