লাভের উপর লাভ। ১০০% ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল। ব্যবসায় উন্নতি, ধন সম্পদ বৃদ্ধির দোয়া।
লাভের উপর লাভ।
১০০% ক্ষতি থেকে বাঁচার আমল। ব্যবসায় উন্নতি, ধন সম্পদ বৃদ্ধির দোয়া।
একবার এক লোক আমার কাছে আসল, লোকটির
পরসোনালিটি ছিল খুবই উত্তম। দেখতে শিক্ষিত মানুষ মনে হল। কিন্তু লোকটি কান্নার
জন্য কথা বলতে পারছিলনা, দুচোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছিল। লোকটির
অবস্থা দেখে আমিও আবেগী হয়ে গেলাম সময় কিছুক্ষণ অতিবাহিত হওয়ার পর আমি জিজ্ঞেস
করলাম আপনি কান্না থামিয়ে আমাকে বলুন আপনার কিসের এত দুঃখ? কেন
এত কান্না করছেন?
এবার লোকটি কান্না থামিয়ে বলল আমি
একসময় সরকারী অফিসার ছিলাম, আর সে যুগে গোল্ডেন শেক হ্যান্ড এর নিয়ম
ছিল অর্থ্যাৎ সরকার ঘোষণা দিয়েছে যদি কেহ স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দিতে চায় সে যেন
ছেড়ে দেয় তাহলে তাকে চাকরীর সমস্ত পেনশন ও আরো অতিরিক্ত মোনাফা দেয়া হবে এতে সরকারের
লাভ হল ওয়ার্কার কমে যাবে আর ওয়ার্কারের লাভ হল একসাথে সবটাকা পেয়ে যাবে। আর তা
দিয়ে ঘর বাড়ী গাড়ী সব হয়ে যাবে লোকটি বলল আমি সে গোল্ডেন শেক হ্যান্ড করি এবং
একসাথে ১৬ লাখ টাকা পেয়ে যাই। আমি আমার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করে সবটাকা ব্যাংকে রেখে দিই আমি একটি ছোট
খাট বেসরকারী চাকরি জোগাড় করি তা দিয়ে আমাদের সংসার চলছিল, ১৬ লাখ টাকা রেখে দিয়েছিলাম
পরবর্তীতে সন্তানদের পড়ালেখা ও বিয়ে শাদিতে খরচ করার জন্য সে বলল আমার একজন বন্ধু
ছিল, তাকে আমি কথায় কথায় আমার সে ১৬ লাখ টাকার কথা বলে দিলাম,
সে বন্ধু এ কথা শুনে আমার পিছনে পরে গেল বলতে লাগল একটি ব্যবসা আছে
তাতে যদি ইনভেস্ট কর তাহলে অনেক বেশী লাভবান হবে।
যদি তুমি পয়সা দাও মেহনত করব আমি আর
ঘরে বসে বসে তুমি মাসে মাসে অতিরিক্ত টাকা ইনকাম করতে পারবে। একসময় আমার স্ত্রী
আমাকে পরামর্শ দিল সে ব্যবসায় যেন ১৬ লাখ ইনভেস্ট না করে অর্ধেক ইনভেস্ট করি, আর
পরীক্ষা করে দেখি সে কত টাকা ফায়দা দেয়। স্ত্রীর কথায় আমি সে বন্ধুকে ৮ লাখ টাকা দিয়ে
দিলাম ব্যবসার জন্য। বন্ধু প্রতি মাসের ১ তারিখ আমার ঘরে এসে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে
যায়।
এখন আমার চাকরি থেকেও টাকা আসছে আবার
এদিক থেকেও প্রতিমাসে ৩০ হাজার টাকা আসছে, ফলে আমাদের ঘরে সচ্ছলতা চলে আসল।
ফলে আমি আরামদায়ক জীবন কাটাচ্ছিলাম ১ বছর এভাবেই কেটে গেল। একদিন বন্ধু বলল ১ বছরে
তোমার ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা লাভ হল, যদি তুমি আরো ইনভেস্ট কর
তাহলে আরো বেশী ইনকাম হত বন্ধুর কথায় লোভে পরে আমি তাকে বাকী ৮ লাখ টাকাও ব্যবসার
জন্য দিয়ে দিলাম, এবং সে প্রতি মাসের ১ তারিখ আমাকে লাভের
টাকা দেয়ার ওয়াদা করল।
কিন্তু ১৬ লাখ টাকা নিয়ে যাওয়ার পর
আমার সে বন্ধু আমার সাথে ঠিকভাবে যোগাযোগ করাই বন্ধ করে দিল, আমি
ফোন করলে ব্যস্থতা দেখায় আগে ১ তারিখ টাকা দিয়ে দিত কিন্তু এখন ১ তারিখ টাকা দেয়না,
১ম মাসে ১০ তারিখ ২য় মাসে ২০ তারিখ ৩য় মাসে এসে পুরা মাস শেষ হয়ে
গেলেও সে টাকা দিতে আসলনা।
আমি যখন তার সাথে দেখা করতে গেলাম, সে
আমাকে বলল ব্যবসার মধ্যে লোকসান হয়ে গেছে ১৬ লাখ টাকা পুরাটাই লোকসানে চলে গেছে এখন
আমার কাছে আপনাকে দে”য়ার মত কোন টাকা পয়সা নাই। সে আরো বলতে
লাগল আমার যখন লাভ হয়েছে তখন আপনাকে আমি লাভের অংশ দিয়েছি এখন যখন ক্ষতি হয়ে গেছে
আপনাকে সে ক্ষতির হিচ্ছা অবশ্যই নিতে হবে। এসব নানান কথা বলে সে আমার ১৬ লাখ টাকা
খেয়ে ফেলেছে আমি যেহেতু তাকে বিশ্বাস করে ১৬ লাখ টাকা দিয়েছি তার কোন ডকুমেন্ট
রাখি নাই তাই কোন আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারছিনা। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম।
সাথে সাথে মনের মধ্যে এই বেদনা যন্ত্রনা দিচ্ছে যে আমি আমার
সন্তানদের উচ্ছশিক্ষার খরচ বিয়ে শাদির খরচ কোথা থেকে পাব?
এসব কথা চিন্তা করতে করতে আমি এতটাই
আবেগাপ্লুত হয়ে পরি যে দু চোখের পানি আটকাতে পারিনা। লোকটির সব কথা শুনে আমি তাকে
প্রশ্ন করলাম আপনার রিজিক কোথায় আছে? জমিনে নাকি আসমানে? সে বলল আপনিই বলুন তখন আমি তাকে বললাম আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন (ওয়া
ফিস সামায়ে রিজকুকুম) অর্থ্যাৎ তোমাদের রিজিক আসমানে আছে।
যখন আমাদের রিজিক আসমানে হয় তাহলে সে
রিজিক কেউ হাইজেক করতে পারবেনা, চুরি করতে পারবেনা। রিজিক পৌঁছানোর
মালিক হলেন আল্লাহ, যদি কেহ রিজিক আসতে বাঁধা সৃষ্টি করে
তাহলে আল্লাহ তায়ালা ভিন্ন পথে রিজিক পৌঁছিয়েই ছাড়বেন। লোকটি কিছুটা শান্ত হল,
তখন আমি তাকে বললাম, দেখুন আপনার যে রিজিক
আল্লাহ দিয়েছেন সেটা যদি কেহ প্রতারনা করে নিয়ে নেয় আপনি তার জন্য একদম ফিকির
করবেন না, আপনার রিজিক যা তা আল্লাহ তায়ালা পুনরায় দিয়ে দিবেন।
কারন যে রিজিক আল্লাহ আপনার জন্য নির্ধারণ করেছেন সেটা আপনি ভোগ না করা পর্যন্ত
আপনার মৃত্যু হবেনা। সুতরাং আপনি ১৬ লাখের জন্য এত পেরেশান হবেন না, এসব কথা শুনে লোকটি সম্পূর্ণ শান্ত হয়ে গেল।
আমি তাকে বললাম তুমি তোমার সে বন্ধুকে
দিল থেকে ক্ষমা করে দাও, আর বল হে আল্লাহ তোমার বান্দা আমার সাথে
প্রতারণা করেছে আমাকে ঠকিয়েছে আমি তাকে ক্ষমা করে দিলাম, হে
আল্লাহ তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দাও আর আমাকে অন্য কোন মানুষকে ঠকানো থেকে বাঁচিয়ে
রাখ আমি তাকে এটাও নসিহত করলাম যখন আল্লাহ আপনাকে পুনরায় মাল ও দৌলত দিবেন তখন
আপনি নিয়মিত সে মালের যাকাত পাই পাই করে দিয়ে দিবেন লোকটি আমার সাথে ওয়াদা করল,
আর আমার কাছে পরামর্শ চাইল বিনা পুঁজিতে কি ব্যবসা করবে? আমি তাকে পরামর্শ দিলাম সে যেন শহর থেকে বাকীতে সার এনে গ্রামে বিক্রী করে
আর যা প্রফিট হয় তা রেখে বাকী টাকা শহরের ব্যবসায়িকে যথাসময়ে দিয়ে দেয়, সে লোকটি আমার কথা মত শহর থেকে বাকীতে সার আনা আরম্ভ করল, আর তা গ্রামের চাষীদের কাছে বিক্রী করতে লাগল সে প্রথমে ১০ /২০ বস্তা দিয়ে
এ ব্যবসা শুরু করল, কিন্তু তার ঈমানদারী ও যথা সময়ে বাকী টাকা
ফেরত দেয়ার কারনে শহরের ব্যবসায়ীরা তাকে ট্রাকে ট্রাকে সার দিতে লাগল, আর সে খুব অল্প লাভে তা কৃষকদের কাছে বিক্রী করতে লাগল, ফলে আশে পাশের গ্রামের সব কৃষকরা অন্যান্য দোকান থেকে না নিয়ে তার দোকান
থেকেই সার কিনার ফলে সে খুব অল্প সময়েই কয়েক ট্রাক সার বিক্রী করে দিত, মাত্র কয়েক বছর পর সে লোকটি যখন আমার সাথে দেখা করতে আসল সে নিজ জবানে
আমাকে বলল হুজুর আমি আপনার পরামর্শে আল্লাহর ওপর ভরসা করে বাকীতে সারের ব্যবসা
শুরু করেছিলাম মাত্র কয়েক বছরেই আমি এখন কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছি এখন আমার যে
মাল ও দৌলত আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন তা ১৬ কোটি থেকেও বেশী হবে এবং আল্লাহর রহমতে আমি
ব্যবসার মধ্যে কখনো কারো সাথে দুই নম্বরিও করিনা, আর প্রতি
বছর বছর পুংখানুপুংখ রুপে হিসাব করে যাকাত দিতেও ভুল করিনা।
সুতরাং আমাদেরও এ ঘটনা থেকে শিক্ষা
গ্রহণ করা উচিত, আল্লাহ তায়ালা আমাদের রিজিক যে কোন উপায়ে পৌঁছাবেন, সে জন্য আমাদের আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে, এবং
সততা ও আমানতদারীর সাথে কাজ করতে হবে, মানুষকে ঠকানো থেকে
বিরত থাকতে হবে এবং যাকাত ফরয হলে অবশ্যই হিসাব নিকাশ করে যথাযথভাবে যাকাত আদায়
করে দিতে হবে। মনে রাখবেন যে ঠকায় সে জিতেনা বরং যে ঠকার পরও ছবর করে আল্লাহ তাকে
জিতিয়ে দেন।
কোন মন্তব্য নেই