১ মিনিটে ৮৭ হাজার উটের মালিক হওয়ার ওজিফা। পৃথিবীর সেরা ধনী হওয়ার আমল। আবদুর রহমান বিন আউফের ওজিফা।
১ মিনিটে ৮৭ হাজার উটের মালিক হওয়ার ওজিফা। পৃথিবীর সেরা ধনী হওয়ার আমল। আবদুর রহমান বিন আউফের ওজিফা।
সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী
হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (রা) আজকে উনি কি কি ওজিফা করে সবচেয়ে ধনী হয়েছেন তা
জানাব
আনাস (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) কে
বলতে শুনেছি, ‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বপ্রথম (ধনী হিসেবে) জান্নাতে প্রবেশ
করবেন আবদুর রহমান বিন আউফ।
তিনি হামাগুড়ি দিয়ে জান্নাতে
প্রবেশ করবেন। ’ (মুসনাদে বাজ্জার : ৭০০৩)
তিনি ১মিনিটে যে ওজিফাটি
করেছেন তার জন্য আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে ৮৭ হাজার উট নির্ধারণ করেছেন,
জান্নাতে ১টি উটের দাম কত
হতে পারে? যার মূল্য বুঝানোর শক্তি পৃথিবীর কারো নাই তবুও কথার কথা যদি
ধরি ১টি উটের দাম ১ টন স্বর্ণ, তাহলে ৮৭ হাজার উটের মূল্য ৮৭ হাজার টন স্বর্ণ হবে
আজ আবদুর রহমান বিন আউফের সে
সব আমল সে সব ওজিফা সম্পর্কে জানব, তিনি কিভাবে অল্প সময়ে সবচেয়ে ধনী সাহাবী
হলেন তাও জানব ইনশা আল্লাহ
অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েও আবদুর রহমান বিন আউফ অত্যন্ত বিনয়ী ও
দুনিয়া বিমুখ ছিলেন। সম্পদের ব্যাপারে সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতেন।
তিনি ভালো খাবার সামনে এলে
কাঁদতেন, একদিন আবদুর রহমান বিন আউফ সিয়াম পালন করছিলেন। ইফতারের সময় তার সামনে ভালো
মানের খাবার পরিবেশন করা হলো।
এ খাবারের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মুসআব ইবনে উমায়ের
ছিলেন আমার থেকে উত্তম মানুষ।
তিনি শহীদ হলে তার জন্য
মাত্র ছোট্ট একখানা কাফনের কাপড় পাওয়া গিয়েছিল। তা দিয়ে মাথা ঢাকলে পা এবং পা
ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত।
এখন আল্লাহ আমাদের জন্য
দুনিয়ার প্রাচুর্য দান করেছেন। আমার ভয় হয়, না জানি আমাদের আমলের বদলা আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে দিচ্ছেন।
অতঃপর তিনি হাউমাউ করে
কাঁদতে কাঁদতে আর খাবার গ্রহণ করেননি। (উসদুল গাবাহ)।
তিনি যখন হিজরত করে মদিনায় এসেছিলেন, তখন ছিলেন সম্পূর্ণ
রিক্ত হস্ত। নবীজি (সা.) তাকে সাদ ইবনে রবি আনসারির সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের
সম্পর্ক করে দেন। সাদ (রা.) তাকে ডেকে বললেন,
আমি আমার সব সম্পদ সমান
দুইভাগ করে আপনাকে একভাগ দিতে চাই। আর আমার দুইজন স্ত্রী আছে।
তাদের যাকে আপনার পছন্দ হয়
আমি তাকে তালাক দেব। তারপর আপনি তাকে বিবাহ করে নেবেন।
কিন্তু আবদুর রহমান
(রা.) বললেন, ‘আল্লাহ আপনার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। ভাই, আমার এসব কোনো কিছুর
প্রয়োজন নেই।
আমাকে শুধু মদিনার বাজারটি
দেখিয়ে দিন। ’ মদিনার কাইনুকা বাজারে ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা শুরু করেন। অল্প কিছু ঘি ও পনির
নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন।
পরবর্তীকালে তিনি অন্যতম
সেরা ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিতে পরিণত হন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার সম্পদ
বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তা কবুলও করেছেন।
কিন্তু সম্পদের প্রতি লোভ ও
আকর্ষণ তার ছিল না। আল্লাহর রাস্তায় এবং মানবকল্যাণে অকৃপণ হাতে সম্পদ ব্যয় করতেই
তিনি আনন্দ পেতেন।
একবার সিরিয়া থেকে বিপুল
পরিমাণ খাদ্যশস্য নিয়ে তার একটি বাণিজ্য কাফেলা মদিনায় আসে।৭০০ উটের পিঠে মালপত্র
বোঝাই ছিল।
এতে সারাটা মদিনায় রব পড়ে
যায়। উম্মুল মোমিনিন আয়শা (রা.) বললেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.) কে
বলতে শুনেছি, আবদুর রহমান জান্নাতে হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করবে।
উম্মুল মোমিনের এ কথা আবদুর
রহমানের কানে গেল। তিনি বললেন, ‘হে জননী! আমি এ বিশাল বাণিজ্য সম্ভার আল্লাহর রাস্তায় দান
করে দিলাম। ’ (উসদুল গাবাহ)
এক গ্রাম্য সাহাবী এসে
রাসুলুল্লাহ (দ) কে সুরা এখলাস সম্পর্কে বললেন, আর নবীজি
(দ) সাহাবীদেরকে ডেকে বললেন
দেখ এ কেমন আযব গ্রাম্য
মানুষ সে সুরা এখলাস খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছে, সে সুরা
এখলাসের ভিতরের গোপন কথা পর্যন্ত বুঝে ফেলেছে
সে গ্রাম্য লোক বলেছে- সুরা
এখলাসের গোপন অর্থ হল যদি আল্লাহ তায়ালা কারো উপর রাজি হয়ে যায় আর তিনি তাকে পছন্দ
করেন তখন খুব অল্প আমলেই অনেক বড় পুরস্কার ও নেয়ামত দান করেন
যদিও সুরাটি খুব ছোট কিন্তু
এতে তৌহিদের আকিদা বর্ণনা করা হয়েছে, যে আকিদা বুঝানোর জন্য ১ লক্ষ ২৫ হাজার
আম্বিয়া দুনিয়াতে এসেছেন
গ্রাম্য লোক যখন এসব কথা বলল, হুজুর (দ) বললেন
সুরাটি ৩ বার পাঠ কর, ১ খতম কুরানের সাওয়াব পাবে। গ্রাম্য
লোকের কোরানের সমঝ দেখে হুজুর (দ) খুবই আনন্দিত হলেন
তখন হযরত আবদুর রহমান বিন
আউফ (রা) হুজুর (দ) এর নিকটে
এসে বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ লোকটি সুরাটি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে
তার কথা শুনে যখন আপনি
আনন্দিত হচ্ছিলেন তখন আমি মনে মনে নিয়ত করলাম, আমার কাছে
একটি উটনি আছে যেটি আজকে বা আগামী কাল বাচ্চা দিবে
এ ধরনের উটনির জন্য ঘরের
সকলেই আগ্রহী থাকে, কারন উটনি বাচ্চা দিলে দুধের অভাব দুর হয়ে যায়- আমি সে
উটটি এই গ্রাম্য সাহাবীকে গিফট করতে চাই
হুজুর (দ) ফরমালেন- হে আবদুর
রহমান বিন আউফ তুমি যখনই এই গ্রাম্য সাহাবীকে গিফট করার জন্য নিয়ত করেছ সাথে সাথে
আমার কাছে জিবরাইল ফেরেশতা আগমন করল
আর জিবরাইল বলল এই গ্রাম্য
লোকটি কুরানের সুরা এখলাস সঠিক ভাবেই বুঝতে পেরেছে, ফলে আপনিও
তার উপর রাজি আল্লাহও তার উপর রাজি
আর আবদুর রহমান বিন আউফ
গ্রাম্য লোকটিকে উটনি গিফট করার নিয়ত করেছে, সে জন্য আল্লাহ তায়ালা
জান্নাতের ফেরেশতাদেরকে হকুম দিয়ে দিয়েছেন
হে আমার ফেরেশতারা আবদুর রহমান
বিন আউফ এর জন্য জান্নাতে ৮৭ হাজার জান্নাতি উটনি সাজিয়ে রাখ।
এসব কথা সমস্ত সাহাবায়ে
কেরাম শুনতে পেল, যখন সে গ্রাম্য সাহাবী মসজিদে নববী থেকে বের হয়ে তার গ্রামের
দিকে চলে যাচ্ছিল
সাহাবীগন সে গ্রাম্য সাহাবীর
জন্য রাস্তার ধারে উট নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, লোকটি যখন মদিনা শরীফের শেষ
সীমায় পৌঁছল গুনে দেখল
মদীনার সাহাবীগন এত বেশী উট
তাকে দান করেছেন তা সংখ্যায় ১০০০ হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ
তখন সে গ্রাম্য সাহাবী আবারও
বলে উঠল, হে আল্লাহ তুমি আসলেই মহান, তুমি তোমার
বান্দাকে অল্প আমলের বদলায় বেশী বেশী দান কর।
আবদুর রহমান বিন আউফ, নির্লোভ ছিল,
দান শিল ছিল, কোরানের সঠিক জ্ঞান প্রাপ্ত
গ্রাম্য সাহাবীকে সন্মান দিতে জেনেছেন, মদিনার ভাই এর সম্পদ
না নিয়ে নিজে পরিশ্রম করেছেন
ফলে তিনি হয়ে উঠেছেন সবচেয়ে
বড় ধনী সাহাবী, জান্নাতি সাহাবী, জান্নাতে ৮৭ হাজার
উটের মালিক
নবম হিজরিতে তিনি রাসুল
(সা.) এর সঙ্গে তাবুক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। এ অভিযানকালে একদিন রাসুল (সা.)
প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যান।
ফিরতে একটু দেরি হয়। এদিকে
নামাজের সময়ও হয়ে যায়। সমবেত মুসল্লিদের অনুরোধে
আবদুর রহমান (রা.) ইমাম
হিসেবে নামাজে দাঁড়িয়ে যান। রাসুল (সা.) ফিরে এসে দেখেন এক রাকাত হয়ে গেছে।
তিনি আবদুর রহমানের পেছনে
ইকতেদা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উপস্থিতি অনুভব করে আবদুর রহমান (রা.) পেছনে
সরে আসার চেষ্টা করেন
কিন্তু রাসুল (সা.) তাকে
নিজের স্থানে থাকার জন্য ইশারা করেন। অতঃপর তিনি দ্বিতীয় রাকাতটিও শেষ করেন
নামাজ শেষে নবীজি বললেন, ‘তোমরা সঠিক কাজ
করেছ। ’
(বোখারি ও মুসলিম)
রাসুল (সা.) এর জীবদ্দশায়
শুধু দুইজন সাহাবি তার ইমামতি করার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
তারা হলেন আবুবকর সিদ্দিক ও
আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.)।
৩১ হিজরি কিংবা ৩২ হিজরিতে
মদিনায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭৫ বছর।
তাকে মদিনার জান্নাতুল
বাকিতে দাফন করা হয়। ওসমান বিন আফফান (রা.) তার জানাজায় ইমামতি করেন।
কোন মন্তব্য নেই