ডঃ ইউনুসের যুগে কোরানী এ আমলটি সবার জন্য জরুরী
ডঃ ইউনুসের
যুগে কোরানী এ আমলটি সবার জন্য জরুরী
বাড়ী, গাড়ি, সন্মান, সুখ, শান্তি ও সফলতার আমল
সন্মানিত দর্শক
মন্ডলী আজকে সুরা বনি ইসরাইলের ৭০ নং আয়াতের ওজিফাটি জানব যে ওজিফাটি করলে আল্লাহ তায়ালা
সন্মান দিবেন, বাড়ী গাড়ী দিবেন, যখন
যা লাগে তা দান করবেন, সকল অভাব দুর করে দিবেন। জীবনের
সকল বিষয়ে সন্মান ও সফলতা দিবেন। দুনিয়ার
সকল অশান্তি ১টি ওজিফার বরকতে দুর করে দিবেন, সে ওজিফাটি বুঝার জন্য
কয়েকটি হাদিস জানা দরকার
১) একবার কুরবানির দিন খুতবার মধ্যে নবী করিম (দ) বলেন- একজন মুসলমানের সন্মান মক্কা নগরীর মত, কুরবানির দিনের মত, হারাম মাসের মত সন্মানিত (বুখারী ১৭৩৯)
২) একজন মুসলমানকে বেইজ্জত করা অসন্মান করা সুদের ৭২টি বড় বড় গুনাহের মধ্যে প্রথম স্তরের গুনাহ, আর সুদের ৭২টি বড় বড় গুনাহ সমুহের মধ্যে সবচেয়ে ছোট গুনাহ হল নিজ মায়ের সাথে জিনা করার সমান। নাউজুবিল্লাহ (তাবরানি ৭১৫১, সিলসিলা সহিহা ১৮৭১)
৩) আয়শা (রা) একদিন নবীজিকে হযরত সাফিয়্যাহ (রা) এর ব্যপারে ইশারা করে বললেন তিনি বেটে বা খাট, তখন আয়শা (রা) এর এই কথার জবাবে নবীজি বলেন হে আয়শা তুমি এখন সাফিয়্যার ব্যপারে যে কথাটি বলেছ তার শারিরিক গঠনের ব্যপারে সমালোচনা করেছ তা যদি সমুদ্রের পানির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয় সমুদ্রের পানির রং পরিবতন হয়ে যাবে।সুতরাং কাউকে কোন অপমানজনক কথা বলা, ছোট করে কথা বলা এতটা বিষাক্ত যে নবীজি বলেন সে বিষাক্ত কথাটি যদি সমুদ্রের পানিতে মিশে যায় তাহলে সমুদ্রের সব পানির রং পরিবতন হয়ে যাবে, দুষিত হয়ে যাবে (আবু দাউদ ৪৮৭৫) এখন আমরা যদি সরাসরি কাউকে অপমান অপদস্থ করি কটু কথা বলি, বা কাউকে হয়ে করার জন্য কোন কাজ করি সেটা কত বড় জঘন্য কত বিষাক্ত হবে একবার চিন্তা করে দেখুন।
৪) মহানবী (দ) বলেন সাদা চুল দাঁড়ি ওয়ালা লোক, আলেম, হাফেজ ও ন্যায়পরায়ন বাদশাকে সন্মান করা আল্লাহকে সন্মান করার মত। সুতরাং তাদেরকে অসন্মান করা মুলত আল্লাহকে অসন্মান করার মত।(আবু দাউদ ৪৮৪৩)
৫) নবীজি বলেন যে বড়দের সন্মান করেনা ছোটদের দয়া করেনা সে আমার উম্মত নয় (তিরমিজি ১৯২৫) এই একটি মাত্র হাদিস যদি আমরা মনে রাখি তাহলে পৃথিবীতে কোন বড়কেই আমরা অসন্মান করার সাহস পাবনা কারন এতে নবীর উম্মতের দপ্তর থেকে নাম কাটা যাওয়ার স্পষ্ট ঘোষনা রয়েছে। সুতরাং নবীর উম্মত দাবীকারীকে অবশ্যই বড়জনকে সন্মান করতে হবে চাই সে বড়জন মা বাবা হউক, চাই ভাই বোন হউক, চাই যে কোন মুরুব্বী হউক চাই শিক্ষক শিক্ষিকা হউক।
৬) মানুষ হিসেবে শিক্ষকদের মর্যাদা অতুলনীয় কারন আমার নবীও শিক্ষক হিসেবেই প্রেরিত হয়েছেন। তাই নবীর মর্যাদার দিকে খেয়াল করে হলেও শিক্ষককে সন্মান করা আমাদের জন্য ফরয।
৭) শিক্ষককে মান্য করার শিক্ষা আমরা হযরত মুসা ও হযরত খিজির (আ) এর ঘটনার মাধ্যমে লাভ করে থাকি, মুসা (আ) একজন বড়
মাপের নবী হওয়া সত্বেও খিজির (আ) এর সকল কথা ও কাজকে মেনে নিয়েছেন। এর মধ্যে ছাত্র
ছাত্রীদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা আছে।
৮) শিক্ষককে সন্মান দেখাতে গিয়ে ইমাম আবু হানিফা উস্তাদের বাড়ির দিকে পা লম্বা করে বসতেন না
৯) ইমাম শাফেয়ী শিক্ষকের মজলিশে কিতাবের পাতা উল্টাতেন খুব সতকতার সাথে। যাতে কিতাবের পাতার আওয়াজে শিক্ষকের বিরক্তির উদ্রেগ না হয়।
১০) হযরত আলী (রা) বলেন যে আমাকে ১টি হরফও শিখিয়েছেন তিনি আমার মালিক আমি তার গোলাম, তিনি চাইলে আমাকে বিক্রী করে দিতে পারে অথবা আমাকে আযাদ করে দিতে পারে।
এতক্ষন ১০টি
বাণী থেকে আমরা বুঝতে পারলাম, প্রত্যেক মুসলমানকে সন্মান করতে
হবে, বিশেষ করে বৃদ্ধ, আলেম, হাফেজ, ন্যাপরায়ন শাসক, শিক্ষক
শিক্ষিকাকে সন্মান করতে হবে, বড়দের সম্নান ও ছোটদের দয়া করতে
হবে। এটাই হল মানুষ হিসেবে প্রত্যেক মানুষের
জন্য বরকতময় কাজ, কারন আল্লাহ তায়ালা সুরা বনি ইসরাইলের ৭০ নং
আয়াতে এরশাদ করেন নিশ্চয় আমি বনি আদমকে সন্মান মর্যাদা দান করেছি। এখন
স্বয়ং আল্লাহ যে মানব জাতিকে সন্মান দিয়েছেন, সে মানব জাতিকে অসন্মান
করা মুলত আল্লাহর বিরোধীতা করার শামিল এবং এ আয়াতে যে শিক্ষাটি আছে তা যদি প্রত্যেক
মানুষ যথাযথ পালন করে, মানুষ হিসেবে প্রতিটি মানুষকে যথাযথ সন্মান
করে তাহলে অটোমেটিক আপনার আমার তথা গোটা জগতের সকলের সন্মান প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে। সকলের
অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে, তাই এই জগতে এই আয়াতটির আমল প্রতিষ্ঠা করা খুব
জরুরী। আল্লাহ তায়ালা বলেন
وَلَقَدْ
كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم
مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا
تَفْضِيلاً
নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা
দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি;
তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট
বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে, সকল মানুষকে সন্মান করা, সকল মুসলমানকে সন্মান করার তৌফিক দান করুন, খাছ করে বৃদ্ধদেরকে সন্মান করার তৌফিক দান করুন, শিক্ষক ও পিতা মাতার প্রতি সর্বোচ্চ সন্মান প্রদর্শনের তৌফিক দান করুন আমিন।
কোন মন্তব্য নেই