মুনাফিকের ২০টি আলামত ও মুনাফিকের শাস্তি

                    মুনাফিকের ২০টি আলামত  শাস্তি                     


মুনাফিক কাকে বলে: মুনাফিকের সংজ্ঞায় সাইয়্যেদ মুফতি আমিনুল ইহসান বলেছেন, মুনাফিক হলো এমন ব্যক্তি যে ইসলামকে মুখে প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরিকে লালন করে।

পাহাড়ি ঈঁদুর: (নাফেকুল ইয়ারবু) পাহাড়ি ঈদুর কে নাফেকুল এয়ারবু বলা হয় আর এই শব্দ থেকে মুনাফিক শব্দের উৎপত্তি। পাহাড়ি ইদুর যেমন খুবই ধুর্ত হয় তারা পাহাড়ে কয়েকমুখি গর্ত খুঁড়ে রাখে এক দিকে পানি দিলে অন্য দিকে বের হয়ে যায় তেমনি মুনাফিকরা খুবই ধুর্ত হয়ে থাকে।

পবিত্র কুরআনের ৩৮টি আয়াত:

পবিত্র কুরআনে ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকের আলোচনা আছে মুনাফিকুন নামে ১টি সুরাও আছে আর  সুরা বাকারার থেকে ২০ নং আয়াতে মোট ১৩টি আয়াতে মুনাফিকের বৈশিস্ট সমুহ বর্ণিত হযেছেহাদীস শরীফেও মুনাফেকিরে অনেক আলামত বয়ান করা হয়েছে

) মুনাফিক দুমুখো স্বভাবের হয় যেমন আল্লাহ বলেন

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللّهِ وَبِالْيَوْمِ الآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ

আর মানুষের মধ্যে কিছু লোক এমন রয়েছে যারা বলে, আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি অথচ আদৌ তারা ঈমানদার নয়। [সুরা বাকারা - ২:৮]

) মুনাফিক প্রতারক ধোকাবাজ হয় যেমন

يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلاَّ أَنفُسَهُم وَمَا يَشْعُرُونَ

তারা আল্লাহ এবং ঈমানদারগণকে ধোঁকা দেয়। অথচ এতে তারা নিজেদেরকে ছাড়া অন্য কাউকে ধোঁকা দেয় না অথচ তারা তা অনুভব করতে পারে না। [সুরা বাকারা - ২:৯]

) মুনাফিকের অন্তর অসুস্থ হয়:

فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللّهُ مَرَضاً وَلَهُم عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ

তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন। [সুরা বাকারা - ২:১০]

) মুনিফকরা নিজেদেরকে শান্তি প্রতিষ্টা কারী মনেকরে : আসলে তারা হল ফিতনাবাজ

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لاَ تُفْسِدُواْ فِي الأَرْضِ قَالُواْ إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ

আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্ গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি। [সুরা বাকারা - ২:১১]

) মুনাফিকরা হল বড় ফ্যাসাদকারী :

أَلا إِنَّهُمْ هُمُ الْمُفْسِدُونَ وَلَـكِن لاَّ يَشْعُرُونَ

মনে রেখো, তারাই হাঙ্গামা সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করে না। [সুরা বাকারা - ২:১২]

) মুনাফিকরা নিজেদের চালাক   অন্যদেরকে বোকা মনে করে:

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آمِنُواْ كَمَا آمَنَ النَّاسُ قَالُواْ أَنُؤْمِنُ كَمَا آمَنَ السُّفَهَاء أَلا إِنَّهُمْ هُمُ السُّفَهَاء وَلَـكِن لاَّ يَعْلَمُونَ

আর যখন তাদেরকে বলা হয়, অন্যান্যরা যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আন, তখন তারা বলে, আমরাও কি ঈমান আনব বোকাদেরই মত! মনে রেখো, প্রকৃতপক্ষে তারাই বোকা, কিন্তু তারা তা বোঝে না। [সুরা বাকারা - ২:১৩]

) মুনাফিকরা উপহাসকারী হয়:

وَإِذَا لَقُواْ الَّذِينَ آمَنُواْ قَالُواْ آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْاْ إِلَى شَيَاطِينِهِمْ قَالُواْ إِنَّا مَعَكْمْ إِنَّمَا نَحْنُ مُسْتَهْزِئُونَ

আর তারা যখন ঈমানদারদের সাথে মিশে, তখন বলে, আমরা ঈমান এনেছি। আবার যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে সাক্ষাৎ করে, তখন বলে, আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আমরা তো (মুসলমানদের সাথে) উপহাস করি মাত্রা। [সুরা বাকারা - ২:১৪]

) মুনাফিকরা অবাধ্যতার বিভ্রান্তিতে ঘুরে বেড়ায়:

اللّهُ يَسْتَهْزِئُ بِهِمْ وَيَمُدُّهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

বরং আল্লাহই তাদের সাথে উপহাস করেন। আর তাদেরকে তিনি ছেড়ে দিয়েছেন যেন তারা নিজেদের অহংকার ও কুমতলবে হয়রান ও পেরেশান থাকে। [সুরা বাকারা - ২:১৫]

) মুনাফিকরা ভ্রষ্টতাকে ক্রয় করে:

أُوْلَـئِكَ الَّذِينَ اشْتَرُوُاْ الضَّلاَلَةَ بِالْهُدَى فَمَا رَبِحَت تِّجَارَتُهُمْ وَمَا كَانُواْ مُهْتَدِينَ

তারা সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ ব্যবসায় লাভবান হতে পারেনি এবং তারা হেদায়েতও লাভ করতে পারেনি। [সুরা বাকারা - ২:১৬]

১০) মুনাফিকরা হেদায়েতের আলো থেকে বঞ্চিত অন্ধকারে নিমজ্জিত:

مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ الَّذِي اسْتَوْقَدَ نَاراً فَلَمَّا أَضَاءتْ مَا حَوْلَهُ ذَهَبَ اللّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِي ظُلُمَاتٍ لاَّ يُبْصِرُونَ

তাদের অবস্থা সে ব্যক্তির মত, যে লোক কোথাও আগুন জ্বালালো এবং তার চারদিককার সবকিছুকে যখন আগুন স্পষ্ট করে তুললো, ঠিক এমনি সময় আল্লাহ তার চারদিকের আলোকে উঠিয়ে নিলেন এবং তাদেরকে অন্ধকারে ছেড়ে দিলেন। ফলে, তারা কিছুই দেখতে পায় না। [সুরা বাকারা - ২:১৭]

১১) মুনাফিকরা অন্ধ, বোবা ও বধির:


صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لاَ يَرْجِعُونَ

তারা বধির, মূক ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না। [সুরা বাকারা - ২:১৮]

১২) মুনাফিকরা সুসময়ের সঙ্গী: (দুধের মাছি)

أَوْ كَصَيِّبٍ مِّنَ السَّمَاء فِيهِ ظُلُمَاتٌ وَرَعْدٌ وَبَرْقٌ يَجْعَلُونَ أَصْابِعَهُمْ فِي آذَانِهِم مِّنَ الصَّوَاعِقِ حَذَرَ الْمَوْتِ واللّهُ مُحِيطٌ بِالْكافِرِينَ

আর তাদের উদাহরণ সেসব লোকের মত যারা দুর্যোগপূর্ণ ঝড়ো রাতে পথ চলে, যাতে থাকে আঁধার, গর্জন ও বিদ্যুৎচমক। মৃত্যুর ভয়ে গর্জনের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে রক্ষা পেতে চায়। অথচ সমস্ত কাফেরই আল্লাহ কর্তৃক পরিবেষ্ঠিত। [সুরা বাকারা - ২:১৯]

১৩) মুনাফিক নবীর ফয়সালাকে পছ্ন্দ করেনা,

فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا

অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হূষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। [সুরা নিসা - ৪:৬৫]

"রাসুলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানকারী এক মুরতাদের শাস্তিঃ

হযরত ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত আছে যে, মদীনায় বিশর নামক একজন মুনাফিক বাস করতো । একবার জনৈক ইহুদীর সাথে তার বিবাদ বেধে যায় । ইহুদী বললোঃ চল, আমরা মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছে গিয়ে এর মীমাংসা করিয়ে আসি । বিশর প্রথমে এ প্রস্তাবে সম্মত হলো না । সে ইহুদী নেতা কাব ইবনে আশরাফের কাছে মীমাংসার জন্য যাওয়ার প্রস্তাব করলো। কাব ইবনে আশরাফ ছিল মুসলমানদের কট্টর দুশমন । বিস্ময়ের ব্যপার এই যে, এই ইহুদী নেতার কাছে মীমাংসা কামনা করছিল মুসলমান পরিচয় দানকারী বিশর। অথচ ইহুদী লোকটি স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর ওপর এর বিচারের ভার অর্পন করতে চাইছিল । আসলে এর কারণ ছিল এই যে, রাসুল (সাঃ) এর বিচার যে পুরোপুরি ন্যায়সংগত হবে তা উভোয়ই জানতো। কিন্তু ন্যায়সংগত মীমাংসা হলে মুনাফিক হেরে যেত, আর ইহুদী জয়লাভ করতো ।

অনেক তর্ক বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত ইহুদীর মতই স্থীর হলো। উভয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে গিয়ে বিবাদটার মীমাংসার ভার তার ওপর অর্পন করলো । রাসুল (সাঃ) মামলার ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে ইহুদীর পক্ষে রায় দিলেন এবং বিশর পরাজিত হয়ে গেল। সে এ মীমাংসায় মনে মনে অসন্তুষ্ট হয় এবং ইহুদীকে সম্মত করে যে, বিষয়টির চূড়ান্ত মীমাংসার জন্য তারা হযরত ওমরের নিকট যাবে । বিশর ভেবেছিল যে, হযরত ওমর যেহেতু কাফেরদের ব্যাপারে অত্যন্ত কঠিন, তাই তিনি ইহুদীর মুকাবিলায় তার পক্ষে রায় দেবেন । দুজনই হযরত ওমরের নিকট উপস্থিত হলো । ইহুদী তাকে পুরো ঘটনা জানালো এবং বললো, এ ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) যে ফয়সালা করেছেন, তা আমার পক্ষে । কিন্তু এ লোকটি তাতে সম্মত নয় । তাই আমাকে আপনার কাছে নিয়ে এসেছে । হযরত ওমর বিশরকে জিজ্ঞাসা করলেন, ঘটনা কি এরূপ? সে বললো, হা । তখন হযরত ওমর বললেন, তাহলে একটু অপেক্ষা কর । এই বলে তিনি ঘরের ভেতর থেকে একখানা তলোয়ার নিয়ে এলেন এবং যে লোক রাসুলের ফয়সালা মেনে নিতে রাযী হয় না, ওমরের কাছে তার ফয়সালা হলো এই.............এই বলে চোখের নিমিষে বিশরকে দিখন্ডিত করে ফেললেন । এরপর বিশরের উত্তরাধিকারীরা রাসুল (সাঃ) এর নিকট হযরত ওমরের বিরুদ্ধে এই মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন যে, তিনি শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত একজন মুসলমানকে হত্যা করেছেন। এ সময় রাসুল (সাঃ) এর মুখ দিয়ে স্বত:স্ফূর্তভাবে এ কথা বেরিয়ে আসে যে, “ওমর কোন মুসলমানকে হত্যা করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে এটা আমি মনে করি না ।

আসলে হযরত ওমর (রাঃ) তাকে এই মনে করে হত্যা করেছেন যে, সে যখন আল্লাহর রাসুলের ফয়সালা প্রত্যাখান করেছে, তখন সে স্পষ্টতই মুরতাদ ও কাফের হয়ে গেছে । ইসলামী শরীয়তে মুরতাদের সর্বসম্মত শাস্তি যে মৃত্যুদন্ড সেটাই তিনি তাকে দিয়েছিলেন । আর এর অব্যবহিত পর সূরা নিসার ৬০ থেকে ৬৮নং আয়াত নাযিল হয়ে হযরত ওমরের অভিমতকে সঠিক প্রমাণিত করে ।

*** এ যুগেও দেখবেন কিছু মানুষ আছেন যারা কোরআন হাদীসের কোন বিধান শুনলে তা যদি নিজের মন মত না হয় তা মানতে অস্বিকার করে এটা হল মুনাফিকের আলামত

১৪) মুনাফিন আবদুল্লাহ বিন উবাই ও যায়েদ বিন আরকাম

তফসিরে মাযহারিতে ১টি  রম্বা ঘটনা আছে তার সংক্ষিপ্ত হল- মুরাইসির যুদ্ধে আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ঝগড়া লাগে, সে ঝগড়া নবীজি মিটিয়ে দেন, কিন্তু মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন উবাই এই সুযোগ আনসারদেরকে উসকে দিয়ে বলেন যে মক্কার মুহাজিরদেরকে তোমরা আশ্রয় দিয়েছ তারা আজ তোমাদের খেয়ে তোমাদের পরে তোমাদের সাথে ঝগড়া করছে? হে আনসাররা তোমরা মুহাজিরদেরকে আর দান করবেনা। তোমরা মদিনায় গিয়ে এসব বাজে লোকগুলিকে বের করে দিবে, এই কথাটি হযরত যায়েদ বিন আরকাম (রা) শুনে সহ্য করতে পারলনা, কারন সে মুলত  মক্কার থেকে আগত মুসলমান ও নবীজিকে বাজে লোক বলল তাই সে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে আর নবীজির দরবারে গিয়ে সব কথা বলে দেয়, এই কথা শুনে নবীজি খুবই চিন্তিত হয়ে গেলেন, কারন এখন যদি আবদুল্লাহ বিন উবাই কে শাস্তি দেয়া হয় তাহলে মুসলমানদের মধ্যে বড় ধরনের ফিতনা শুরু হবে, তাই নবীজি (দ) এর বিচার করলেন না, কিন্তু লোকজন যায়েদ বিন আরকাম কম বয়স্ক লোক হওয়ায় সকলেই তাকে বলতে লাগল তুমি আমাদের সরদারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিলে? এই কথায় যায়েদ বিন আরকাম খুবই চিন্তিত হয়ে গেলেন, আর সব সময় কামনা করছিলেন যেন মুনাফিকের বিরুদ্ধে আল্লাহ অহি নাজিল করেন, এই কথাটি সকলের মুখে মুখে চর্চা হতে লাগল, উমর (রা) এসে বলেন এয়া রাসুলাল্লাহ আপনি আমাকে অনুমিত দিন আমি তার গর্দান নামিয়ে ফেলি, কিন্তু নবীজি অনুমতি দিলেন না, তখন ইবনে উবাই এর ছেলে আবদুল্লাহ আসলেন তিনি খাটি মুমিন ছিলেন, তিনি এসে নবীজিকে বলেন এয়া রাসুলুল্লাহ আপনি আমার বাবাকে যদি এসব কারনে হত্যা করার জন্য অনুমতি দিয়ে থাকেন তাহলে অন্য কাউকে না দিয়ে আমাকে অনুমতি দিন আমি নিজেই আমার মুনাফিক ফিতার মাথা আপনার সামনে এনে হাজির করব, কারন অন্য কেহ যদি আমার বাবাকে হত্যা করে সে হত্যাকারীর সাথে আমার মনোমালিন্য সৃষ্টি হবে। কিন্তু নবীজি কাউকেই এই কাজের অনুমতি দিলেন না। যখন মদিনায় এসব বিষয়ে বেশী চর্চা শুরু হয়ে গেল তখন নবীজি অসময়ে সফরে বের হয়ে গেলেন, আর সে সফরে নবীজির পাশে পাশে হযরত জায়েদ বিন আরকাম চলছিলেন তিনি আশা করছিলেন অহি নাজিল হবে মুনাফিকের বিরুদ্ধে, ঠিকেই সে সফরে সুরা মুনাফিকুন নাজিল হল। আর তাতে যায়েদ বিন আরকামের কথাকে আল্লাহ সত্যায়িত করলেন আর মুনাফিকদের মুখোষ উম্মোচিত করে দিলেন। আল্লাহ মুনাফিকদের চরিত্র তুলে ধরছেন তাদের কিছু বৈশিস্টও এই সুরাতে বয়ান করেছেন যেমন

১) মুনাফিকরা মিথ্যা শপথ করে আর সে শপথকে তারা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে

اتَّخَذُوا أَيْمَانَهُمْ جُنَّةً فَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ إِنَّهُمْ سَاء مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

তারা তাদের শপথসমূহকে ঢালরূপে ব্যবহার করে। অতঃপর তারা আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করে। তারা যা করছে, তা খুবই মন্দ। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:]

) মুনাফিকদের চেহেরা সুরত ভেষ ভুষা মনমুগ্ধ কর হবে

وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِن يَقُولُوا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ

আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, তখন তাদের দেহাবয়ব আপনার কাছে প্রীতিকর মনে হয়। আর যদি তারা কথা বলে, তবে আপনি তাদের কথা শুনেন। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:]

) যে কোন শোর গোলকেই তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করবে

يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ

প্রত্যেক শোরগোলকে তারা নিজেদের বিরুদ্ধে মনে করে।

১৫) মুনাফিকরা নবীর সাথে দোয়াতে শরিক হয়না

সুরা মুনাফিক এর ৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ لَوَّوْا رُؤُوسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّونَ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ

যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমরা এস, আল্লাহর রসূল তোমাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন, তখন তারা মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং আপনি তাদেরকে দেখেন যে, তারা অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:৫]

ঘটনা কি? আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মুনাফিক সে নামাজে সবার সামনে রাসুলের কাছাকাছি বসত, লম্বা লম্বা দাড়ি ছিলসে জুমার  দিন নবীজির খুতবার আগে দাড়ায়ে লোকদেরকে উদ্দেশ্যে বলতেন হে আমার ভয়েরা এখন আপনাদের সামনে যিনি খুতবা দিবেন তিনি হলেন আল্লাহর রাসুল, তিনি তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বার্তাবাহক, তোমরা তার কথা শুনবে, তার কথা মানবে

আবদুল্লাহ বিন উবায় যখন উহুদের যুদ্ধ থেকে গাদ্দারি করে এক দলকে নিয়ে যুদ্ধের ময়দান থেকে চলে আসল, এরপর থেকে মুসলমানরা আর তার কথা শুনেনা তাকে পছন্দ করেনাউহুদের যুদ্ধের ঘটনার পর রাসুল যখন জুমার খুতবা দিতে মিম্বরে উঠে তখন নিয়ম অনুযায়ী আবদুল্লাহ বিন উবায় চাপাবাজি করতে দাঁড়ায়, তখন আশে পাশে লোকজন তার কাপড় ধরে টান দিয়ে বসিয়ে দেয়, তাকে চাপাবাজি করতে দেয়না, তখন সে মসজিদ থেকে মানুষের কাঁধের উপর দিয়ে ডিঙ্গিয়ে মসজিদে থেকে বের হয়ে যাচ্চিল আর বলতে লাগল, “আজ তোমরা আমাকে অপমান করলে আমি কি খারাপ কিছু বলি?” আসলে সে রাসুলের ব্যপারে যে বক্তব্য দেয় তা তার দিলের কথা নয়, বরং মুখের কথা  এরপর কয়েকজন মুসলমান আবদুল্লাহ বিন উবায়কে গিয়ে বলে আপনি উহুদের ময়দান থেকেও বের হয়ে আসলেন মসজিদে থেকেও বের হযে আসলেন তা ঠিক হয়নি, চলুন আপনি ও আপনার সাথীদের নিয়ে রাসুলের দরবারে যাই তিনি আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবেন দোয়া করবেন এ কথা শুনে আবদুল্লাহ বিন উবাই ঘৃণাভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর সে কথাটাই আল্লাহ বলেন মুনাফিকুন এর ৫ নং আয়াতে বলেন

   وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا يَسْتَغْفِرْ لَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ لَوَّوْا رُؤُوسَهُمْ وَرَأَيْتَهُمْ يَصُدُّونَ وَهُم مُّسْتَكْبِرُونَ

যখন তাদেরকে বলা হয়ঃ তোমরা এস, আল্লাহর রসূল তোমাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করবেন, তখন তারা মাথা ঘুরিয়ে নেয় এবং আপনি তাদেরকে দেখেন যে, তারা অহংকার করে মুখ ফিরিয়ে নেয়। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:৫]

আবদুল্লাহ বিন উবাই এর জানাযা:

এই আবদুল্লাহ বিন উবাই এর ছেলের নামও আবদুল্লাহ তিনি ছিলেন খাঁটি মুমিন- মুনাফিক আবদুল্লাহ বিন উবাই যখন মারা গেছে, তখন তার ছেলে আবদুল্লাহ নবীজির () কাছে আসছেন, আর বলছেন এয়া রাসুলাল্লাহ () আপনার চাচা আব্বাস (রা) যখন বদরের যুদ্ধে বন্ধি হয়ে আসছে, আপনার চাচার শরিরটা ছিল লম্বা, তার গায়ে কারো জামা ফিটিং হচ্ছিলনা, তখন আপনি আমার বাবার একটি জামা নিয়ে আপনার চাচাকে দিয়েছিলেন, সে হিসেবে আমার বাবা একটা জামা আপনার কাছে পাওনা, এখন আমার বাবার জন্য আপনি আপনার একটি জামা দিবেন আমি সে জামা দিয়ে আমার বাবাকে কাফন দিব নবীজি নিজের একটি জামা দিয়ে দিলেন, এবার সে ছেলে নবীজিকে নিজের বাবার জানাযা পড়ানোর জন্য অনুরোধ করল নবীজি জানাযা পড়াতে বের হলেন তখন হযরত ওমর (রা) বললেন এয়া রাসুলাল্লাহ আপনি জানেন সে মুনাফিক তাহলে কেন আপনি তার জানাযা পড়াবেন? তখন নবীজি ওমর (রা) কে বললেন ওমর সরে যাও, আমি জানাযা পড়াব আমাকে এখতেয়ার দেয়া হয়েছে

اِسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ اَوۡ لَا تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ ؕ اِنۡ تَسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ سَبۡعِیۡنَ مَرَّۃً فَلَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰهُ لَهُمۡ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یَهۡدِی الۡقَوۡمَ الۡفٰسِقِیۡنَ

তুমি এদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর বা না কর, এমনকি তুমি যদি সত্তর বারও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর, তবুও আল্লাহ তাআলা তাদের কখনো ক্ষমা করবেন না। কারণ তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে, আর আল্লাহ ফাসিক লোকদেরকে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা আত-তওবা : আয়াত ৮০)

(নবিজি বলেন) আমি যদি জানতাম তাদের জন্য সত্তর বারের বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন, তাহলে আমি তাই করতাম।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জানাজা আদায় করলেন এবং তার জানাজার সঙ্গে গেলেন। তিনি তার কবরের সামনে দাঁড়ান এবং সকল কাজ শেষ করেন। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে আমার দুঃসাহসিকতায় আশ্চর্যবোধ হল। আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। আল্লাহর শপথ! কিছুক্ষণ পরেই এ দুটি আয়াত অবতীর্ণ হয়-

وَ لَا تُصَلِّ عَلٰۤی اَحَدٍ مِّنۡهُمۡ مَّاتَ اَبَدًا وَّ لَا تَقُمۡ عَلٰی قَبۡرِهٖ ؕ اِنَّهُمۡ کَفَرُوۡا بِاللّٰهِ وَ رَسُوۡلِهٖ وَ مَا تُوۡا وَ هُمۡ فٰسِقُوۡنَ

আর তাদের মধ্যে যে মারা গিয়েছে, তার উপর তুমি জানাযা পড়বে না এবং তার কবরের উপর দাঁড়াবে না। নিশ্চয় তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করেছে এবং তারা ফাসিক অবস্থায় মারা গিয়েছে।’ (সুরা তওবা : আয়াত ৮৪)

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর কোনো মুনাফিকের জানাজা আদায় করেননি এবং এদের কবরের পাশেও দাঁড়াননি।’ (তিরমিজি ৩০৯৭)

আল্লাহ কেন মুনাফিকের প্রতি এত কঠোর?

কারন যুগে যুগে ইসলামের ক্ষতি করেছে সবচেয়ে বেশী মুনাফিকেরা, আজো মুনাফিকেরাই বেশী ক্ষতি করছে, উদাহারণ স্বরুপ বর্তমানে যে মুসলমানদের সাথে কাফেরদের যুদ্ধ চলছে কিছু মুনাফেক কাফেরদের পক্ষে কথা বলছে।

মুনাফিকদের আরো আলামত

# তারা নামাজে দাঁড়াবে অত্যন্ত অমনোযোগি হয়ে (কামু কুসালা)

# তারা ওয়াদা করে ওয়াদা খেলাফ করবে (বুখারী)

# তারা আমানতের খেয়ানত করবে (বুখারী)

# তারা যখন কথা বলবে মিথ্যা বলবে (বুখারী)

# ঝগড়া বিবাদে গালি গালাজ করে (বুখারী)

# বাচাল হওয়াও মুনাফিকের আলামত (তাবরানি)

# কৃপণ হওয়াও মুনাফিকের আলামত (তাবরানি)

# মুনাফিক বটগাছের মত বাতাসে সমুলে উৎপাঠিত হয়

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মুমিনের উদাহরণ হল ক্ষেতের শস্যের মতো যাকে বাতাস সর্বদা আন্দোলিত করতে থাকে। মু'মিন সদাসর্বদাই বিপদগ্রস্ত হতে থাকবে। মুনাফিক হল বট গাছের মতো যা বাতাসে না হেললেও (ঝড়ে) সমূলে উৎপাটিত হয়। সহীহঃ তাখরাজুল ঈমান ইবনু আবী শাইবা (৮৬),

# মুনাফিকদের জন্য ফযর ও এশারের নামাজ কষ্টসাধ্য হবে (বুখারী ৬৫৭)

# মুনাফিকরা হযরত আলী (রা) কে ভালোবাসতে পারেনা (মুসলিম ১৪৩)

# যে সব নারী বিনা কারনে তালাক চাই তাদেরকেও নবী করিম () মুনাফিক রমনী বলেছেন (তিরমিজি ১১৮৬)

মুনাফিক দোটানায় দুদল্যমান

 مُّذَبۡذَبِیۡنَ بَیۡنَ ذٰلِکَ ٭ۖ لَاۤ اِلٰی هٰۤؤُلَآءِ وَ لَاۤ اِلٰی هٰۤؤُلَآءِ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰهُ فَلَنۡ تَجِدَ لَهٗ سَبِیۡلًا ﴿۱۴۳

তারা এর মধ্যে দোদুল্যমান, না এদের দিকে আর না ওদের দিকে। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তুমি কখনো তার জন্য কোন পথ পাবে না। আল-বায়ান

মুনাফিক বিভ্রান্ত ছাগির মত

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের উদাহরণ হচ্ছে, ঐ ছাগীর ন্যায়, যে দুই পাঠা ছাগলের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। (প্রবৃত্তির তাড়নায়) কখনও এটার কাছে যায়, কখনও অপরটির কাছে যায়। [মুসলিম: ২৭৮৪] মুনাফিক নিজেকে মুশরিকও বলতে চায় না। আবার ঈমানদারও হতে চায় না। [তাবারী]

মুনাফিকদের শাস্তি কি হবে?

মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন শাস্তি নির্ধারিত আছে, আল্লাহ সুরা নিসার ১৪৫ নং আয়াতে বলেন

 اِنَّ الۡمُنٰفِقِیۡنَ فِی الدَّرۡکِ الۡاَسۡفَلِ مِنَ النَّارِ ۚ وَ لَنۡ تَجِدَ لَهُمۡ نَصِیۡرًا ﴿۱۴۵﴾ۙ

মুনাফিকরা তো জাহান্নামের নিম্নতমস্তরে থাকবে এবং তাদের জন্য আপনি কখনো কোন সহায় পাবেন

দারকুল আসফালকি? বা নিম্নতম স্তর কি এ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সেটা হবে বদ্ধ সিন্ধুক। [মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবাহঃ ১৩/১৫৪, নং ১৫৯৭২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘দারকুল আসফালহচ্ছে, এমন কিছু ঘর যেগুলোর দরজা বন্ধ করা আছে। আর সেগুলোকে উপর ও নিচ থেকে প্রজ্জলিত করা হবে।  না।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে

(১) মিথ্যা, (২) ওয়াদাখেলাফি (৩) আমানতের খেয়ানত (৪) চাপাবাজি (৫) প্রতারনা (৬) গালমন্দ (৭) নবীর প্রতি বিদ্বেষ ভাব (৮) নামাজে অলসতা (৯) মিথ্যা শপথ (১০) দুতিয়াপনা সহ সব ধরনের কপটতা মুনাফিকি চরিত্র থেকে হেফাজত করুন আমিন  

কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.