মসজিদে দান করার ফজিলত। মসজিদ পরিচালনার ফজিলত ও নিয়ম। দান সদকার ফজিলত। দান কোথায় করবেন?

 

দান সদকা মসজিদের ফজিলত



إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ

নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। [সুরা তাওবা - ৯:১৮]

হাদিস:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ أَحَبُّ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ مَسَاجِدُهَا وَأَبْغَضُ الْبِلاَدِ إِلَى اللَّهِ أَسْوَاقُهَا ‏"‏ ‏.‏

আল্লাহ তাআলার কাছে সব চাইতে প্রিয় জায়গা হলো মাসজিদসমূহ আর সব চাইতে খারাপ জায়গা হলো বাজারসমূহ। (মুসলিম ১৪১৪)

 

আমরা খারাপ জায়গায় খরচ বেশী করি নাকি আল্লাহর প্রিয় জায়গায় খরচ বেশী করি? আমরা কি মসজিদে বেশী খরচ করি নাকি বাজারে খরচ বেশী করি? আমরা কি আল্লাহর রাস্তায় বেশী খরচ করি নাকি বেহুদা খরচ বেশী করি?

দানের প্রকার প্রতিদান:

) যে ভালো কাজে দান করল সে নেকি অর্জন করল,

) যার দান করার সামর্থ নাই কিন্তু মনে মনে আফসুস করল হায় আমার যদি সামর্থ্য থাকত তাহলে আমিও আজ দান করতে পারতাম, এই আফসুসকারীও দান না করেও একই নেকি অর্জন করল

) যে গুনাহের কাজে দান করল সে গুনাহ অর্জন করল

) আর যে অভাবের কারনে গুনাহের কাজে দান করতে পারলনা কিন্তু মনে মনে আফসুস করল হায় যদি আমার কাছে টাকা থাকত তাহলে আমিও এই গুনাহের কাজ করতে পারতাম তাহলে সে অভাবি গুনাহ না করেও গুনাহগার হবে

 

আল্লাহর জন্য খরচ করলে আল্লাহ ৭০০ গুন বাড়িয়ে দেন

একবার এক প্রখ্যাত দানশীল সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে জাফর নিজের একটা জমি দেখতে গেলেন সেখানে একটি গোত্রের খেজুর গাছের ছায়ায় বসলেন এবং একজন নিগ্রো ক্রীতদাসকে দেখতে পেলেন সে বাগানটি পাহারা দিচ্ছিল

কিছুক্ষণ পর সে খাওয়ার জন্য তিনটি রুটি বের করলো। সে রুটি খাওয়া শুরু করার আগেই একটা কুকুর এসে তাঁর কাছে ঘেঁসে বসলো। ক্রীতদাসটি একটি রুটি কুকুরকে দিল। কুকুর তা খেয়ে ফেললো। সে তাকে আরো একটি দিল

কুকুর তাও খেয়ে ফেললো। অতঃপর সে তৃতীয় রুটিটিও দিল এবং এক নিমিষেই কুকুর তাও খেয়ে ফেললো। আবদুল্লাহ তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগলেন

আবদুল্লাহ বললেনঃ তুমি প্রতিদিন কয়টি রুটি খাও?

ক্রীতদাস বললোঃ তিনটি

আবদুল্লাহ বললেনঃ তুমি নিজে না খেয়ে সব টা রুটি কুকুরকে দিয়ে দিলে কেন?

ক্রীতদাস বললোঃ  অঞ্চলে কোন কুকুর নেই।  কুকুরটা নিশ্চয়ই অনেকদূর থেকে এসেছে এবং নিশ্চয়ই সে ক্ষুধার্ত। তাই তাকে ফিরিয়ে দেয়া পছন্দ করি নি

আবদুল্লাহ বললেনঃ আজ তুমি কী খাবে?

ক্রীতদাসঃ আজ আমি উপোষ করবো

আবদুল্লাহ ইবনে জাফর মনে মনে বললেন, এতো আমার চেয়েও দানশীল

অতঃপর  খেজুরের বাগান এবং ক্রীতদাসকে কিনে নিলেন এবং ক্রীতদাসকে স্বাধীন করে বাগানটি তাকে উপহার দিলেন দেখুন ক্রীতদাসটি মাত্র ৩টি রুটি দান করলেন আর সে এখন একটি বাগানের মালিক হয়ে গেল

সূরা বাকারার ২৬১ নং আয়াতে এই ওয়াদার উল্লেখ রয়েছে

مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّئَةُ حَبَّةٍ وَاللّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاء وَاللّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায় প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ [ সুরা বাকারা :২৬১ ]

এ থেকে বুঝা যায় একে ৭০০ গুনা প্রতিদান রয়েছে

দান সদকার দ্বারা বিপদ দুর হয় রোগ ভালো হয় (মুসা আ এর গাছের পাতার ঘটনা)

আগের যুগে কারো বড় ধরনের অসুখ হলে তার আত্মীয়স্বজনেরা সবচেয়ে প্রথম যে কাজ করত তা হল সদকা করা। চিকিৎসকের কাছে যেতেন পরে। প্রথম কাজ হত সদকা করা, কারন সদকা তকদীরকে পরিবর্তন করে দেয়। ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা করা সুন্নত। শরীয়তে ডাক্তারের কাছে যেতে নিষেধ করেনি। তবে এ কথা অবশ্যই মনে রাখবেন ডাক্তার আপনাকে ঔষদ দিবে কিন্তু সুস্থ করে তুলতে পারবে না। সুস্থতা দান করার একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ তায়ালা।সেজন্য যখনই অসুস্থ হয়ে যাও প্রথমে সদকা কর তারপর ডাক্তারের কাছে যাও। আল্লাহ তায়ালা সে সদকার বরকতে ডাক্তারের ঔষধ দ্বারা শেফা দান করবেন।

হযরত মুসা (আঃ) এর পেটে ব্যথা শুরু হল তখন তিনি কুহে তুরে চলে গেলেন, তিনি আল্লাহকে সরাসরি বলল হে আমার মালিক আমার পেটে প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে, (আল্লাহু আকবর) আল্লাহ তায়ালা বললেন অমুক জঙ্গলে চলে যাও সেখানে একটা গাছ দেখবে সে গাছের পাতার রস পান করলে তুমি সুস্থ হয়ে যাবে। হযরত মুসা (আঃ) আল্লাহ হকুম মত সেখানে গিয়ে গাছের পাতার রস পান করলেন এবং সুস্থ হয়ে গেলেন। কিছুদিন পর তিনি যখন আবার একই রকমের ব্যথা অনুভব করলেন তখন তিনি আল্লাহর কাছে কোন শেকায়েত না করে সে জঙ্গলে সরাসরি গিয়ে সে গাছের পাতার রস খেয়ে ফেললেন কিন্তু এবার ব্যথা দুর হল না বরং ব্যথা আরো বেড়ে গেল। তখন মুসা (আঃ) কুহে তুরে গিয়ে আল্লাহকে বলল হে আমার মালিক আমি গতবারের মত একই ব্যথা অনুভব করলাম গতবারে তোমার হকুমে যে পাতার রস পান করেছিলাম এবারও সে পাতার রস পান করলাম কিন্তু আমার ব্যথা আরো বেড়ে গেল, তখন আল্লাহ তায়ালা ফরমালেন হে মুসা গতবার আমার হকুম ছিল এবার আমার হকুম ছিল না, সে গাছের পাতায় কোন সুস্থতা নাই সুস্থতা দেয়ার মালিকতো আমি, গাছের পাতাতো হল উছিলা মাত্র। সে জন্য অসুস্থ হলে আগে সদকা করবেন, তারপর ডাক্তারের কাছে যাবেন ডাক্তার এর দেয়া ঔষদ আপনাকে শেফা দিবে না শেফা দিবেন একমাত্র আল্লাহ।

সে জন্য আল্লাহর রসুল খুব সুন্দর এরশাদ করেন, (হাসসিনু আমওয়ালাকুম বিজজাকাত) তোমাদের মালসমুহকে জাকাতদ্বারা পাক কর। (ওয়া দাবু মারদাকুম বিসসাদকা) আর তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা সদকা দ্বারা কর

 

কৃপনের মানিব্যাগ: কৃপণরা পকেটে হাত ঢুকায় কিন্তু মানিব্যাগ বের করতে পারেনা, খালি হাত বের করে, অনেক বন্ধদের দেখবেন পকেটে টাকা আছে কিন্তু তবুও আপনার সাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকে  খাবে নিজের পকেট থেকে খরচ করবেনা

 

কৃপণতার ক্ষতি

অনেকের সামথ আছে কিন্তু কৃপনতার কারনে খরচ করতে পারেনা,

 

তাদের জন্য কি কি ক্ষতি হবে তা আল্লাহ বয়ান করেছেন-

 

) কৃপণ লোকের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ যেমন সুরা হুমাযায় আল্লাহ বলেন

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ,

الَّذِي جَمَعَ مَالًا وَعَدَّدَهُ

যে অর্থ সঞ্চিত করে ও গণনা করে

 

) কৃপণের মাল এক সময় তার হাতছাড়া হয়ে যাবে নিশ্চিত যেমন আল্লাহ বলেন সুরা হুমাযায়

يَحْسَبُ أَنَّ مَالَهُ أَخْلَدَهُ

সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সাথে থাকবে!

৩) কৃপণদের ধন সম্পদ তার জন্য ক্ষতির কারন হবে, কিয়ামতের দিন গলায় ফাঁস হবে যেমন সুরা ইমরানের ১৮০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

তোমরা কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তোমাদের যা দিয়েছেন তা থেকে ব্যয়ে কৃপণতা করলে তোমাদের মঙ্গল হবে। আসল সত্য হচ্ছে, কৃপণতা তোমাদের জন্যেই অমঙ্গলের। যা নিয়ে কৃপণতা করবে, কেয়ামতের দিন সেটাই গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়াবে।

) কৃপণ ব্যক্তি ও কৃপনতা শিক্ষাদান কারীর জন্য রয়েছে অপমান যেমন সুরা নিসার ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِينًا

যারা নিজেরাও কার্পন্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সে সব বিষয় যা আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে দান করেছেন স্বীয় অনুগ্রহে- বস্তুত তৈরী করে রেখেছি কাফেরদের জন্য অপমান জনক আযাব। [সুরা নিসা - ৪:৩৭]

) কৃপণরা বেপরোয়া হয়, পক্ষান্তরে যারা দান করে তাদের মন নরম হয় তারা ভদ্র হয়

) যারা কৃপনতা করে তারা কল্যাণকর বিষয়কেই অস্বিকার করে

) যারা কৃপন তারা বেশী দুঃখ কষ্টে পতিত হবে, সহজেই তারা ধ্বংস হবে

) তারা কবরে গিয়ে তখন শুধু আফসুস করবে হায় আমি মসজিদে কেন দান করতাম না, হায় আমি মাদরাসায় কেন দান করতাম না, হায় আমি গরিব মিসকিন দেরকে কেন দান করতাম না  যেমন  সুরা লাইল এর ৮- ১১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

وَأَمَّا مَن بَخِلَ وَاسْتَغْنَى

আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয়

وَكَذَّبَ بِالْحُسْنَى

এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে,

فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَى

তবে আমি তার জন্যে দুঃখ কষ্ট ও ধ্বংসের পথে চলাকে সহজ করে দেবো।

وَمَا يُغْنِي عَنْهُ مَالُهُ إِذَا تَرَدَّى

কবরে গেলে ধন-সম্পত্তি কি তার কোন কাজে লাগবে?

৯) যারা দান করেনা তারা মৃত্যুর পর হায় হুতাশ করে বলবে ওহে প্রভু একবার সুযোগ দাও আমি গিয়ে আমার সম্পদ মসজিদে মাদরাসায় এতিমখানায় দান করে আসি যেমন সুরা মুনাফিকুন এর ৯-১০ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُلْهِكُمْ أَمْوَالُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল না করে। যারা এ কারণে গাফেল হয়, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:৯]

وَأَنفِقُوا مِن مَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوْلَا أَخَّرْتَنِي إِلَى أَجَلٍ قَرِيبٍ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ الصَّالِحِينَ

আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। [সুরা মুনাফিক্বুন - ৬৩:১০]

# তাহলে যারা আজকে দুনিয়ার জমিনে জীবিত আছেন, যাদের পকেটে টাকা আছে, যাদের সামথ আছে তারা কেন দান না করে জমা করে রাখবেন? কেন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার আগে আগে দান করবেন না?

মৃত্যুর পর সদকায়ে জারিয়ার উপকার

যেমন মুসলিমের ৪০৭৭ নং হাদিসের বর্ণনা

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ‏"‏ ‏.‏

 

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মানুষ মারা যায় তখন তিন প্রকার আমল ব্যতীত তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়।

১. সাদাকায়ে জারিয়া

২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার সাধিত হয় অথবা

৩. নেককার সন্তান যে তার জন্য দুআ করতে থাকে।

 

সদকায়ে জারিয়া কোনগুলি?

আপনি একজন ক্ষুধার্থকে বেলা খাবার দিলেন তাহলে আপনি দাতা হিসেবে একবারই সাওয়াব পাবেন, কিন্তু আপনি যদি দীর্ঘ মেয়াদী সাওয়াব পেতে চান তাহলে আপনাকে এমন জায়গায় দান করতে হবে যা কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে এবং যার ছাওয়াবও আপনি কবরে কিয়ামত পযন্ত পেতে থাকবেন

যেমনমাদরাসায় দান করা, মসজিদে দান করা, হাসপাতাল প্রতিষ্টা করে দেয়া, ব্রিজ নির্মান করে দেয়া, আলেম বানিয়ে দেয়া, হাফেজ বানিয়ে দেয়া এর মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী প্রতিষ্ঠান হল মসজিদ কারন মসজিদে আপনি যদি দান করেন আর সে মসজিদ যদি হাজার বছর টিকে থাকে সে মসজিদে যত নেক আমল হবে তার একটি অংশ আপনার কাছে পৌঁছে যাবে

মসজিদ পুলসিরাতের বাহন: হযরত আবদুর রহমান সফুরী (রহ) তার নুজহাতুল মাজালিসে হাদিস নকল করেন যখন বান্দা পুলসিরাত পার হতে যাবে তখন তাদেরকে বলা হবে তোমরা নিজ নিজ যানবাহনে উঠে বস, তখন ইমাম ও মুয়াজ্জিনের নেতৃত্বে মুসল্লীরা তাদের নিজ নিজ মসজিদে উঠে বসবে যে মসজিদকে তারা আবাদ করত আর সে মসজিদ জাহাজ যেমন সমুদ্রের পানির উপর দিয়ে চলে ঠিক সেভাবে পুলসিরাতের উপর দিয়ে চলে যাবে

আল্লাহর প্রতিবেশী: কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা বলবেন আমার প্রতিবেশীরা কোথায়, ফেরেশতারা বলবেন হে আল্লাহ কে আপনার প্রতিবেশী? আল্লাহ তায়ালা বলবেন যারা মসজিদকে আবাদ করে তারাই আমার প্রতিবেশী

তফসিরে কাশশাফ এর লিখক জারুল্লাহ জমখশরি, উনি মক্কায় গিয়ে মসজিদে হারাম থেকে আর বের হন না তাই আরবগন তাকে জারুল্লাহ উপাধি দিয়েছেন জরুল্লাহ অথ হল আল্লাহর প্রতিবেশী

# মসজিদে বসে থাকলেও লাভ কেননা প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসে ১০টি করে নেকি

হেদায়েত লাভের জন্য মসজিদ আবাদ করা

হেদায়েত লাভ করে আপনি যদি দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতা চান তাহলে অবশ্যই মসজিদ আবাদ করার জন্য যা যা করতে হবে তা করবেন তাহলেই আপনি সফল হবেন

যেমন আল্লাহ তায়ালা সুরা তওবার ১৮ নং আয়াতে এরশাদ করেন

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَأَقَامَ الصَّلاَةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَلَمْ يَخْشَ إِلاَّ اللّهَ فَعَسَى أُوْلَـئِكَ أَن يَكُونُواْ مِنَ الْمُهْتَدِينَ

নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে। [সুরা তাওবা - ৯:১৮]

এ আয়াতের শিক্ষা

) ঈমানদারগন মসজিদকে আবাদ করে সুতরাং কোন বে ঈমান কাফের মুশরিক মসজিদ আবাদ করার দায়িত্ব নিতে পারেনা

) যারাই মসজিদকে আবাদ করবে আবাদে সাহায্য করবে তারাই হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে

 

প্রশ্ন: অমুসলিমের দান দিয়ে মসজিদ নির্মান জায়েজ কিনা?

ফোকাহায়ে কেরাম বলেন মসজিদে অমুসলিমের টাকা গ্রহণ করা না জায়েজ, যদি অমুসলিম টাকা দেয় তা দিয়ে মসজিদের মুল স্থানে সিজদার জায়গায় খরচ করা যাবেনা বরং টয়লেট, অজুখানায় খরচ করা যাবে কারন

إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللّهِ مَنْ آمَنَ بِاللّهِ

নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে

 

সুতরাং আজকের আলোচনার সার সংক্ষেপ

) আল্লাহর রাস্তায় দান করলে ৭০০ গুনা ফায়দা যেমন সুরা বাকারা ২৬১ নং আয়াতের বণনা

) দান সদকার দ্বারা আল্লাহ রোগ শোক দুর করে দেন

) যারা কৃপণতা করে তাদের জন্য রয়েছে ওয়ায়েল (দুর্ভোগ) (সুরা হুমাযা)

) কৃপণ লোক তার সম্পদ নিজে ভোগ করতে পারেনা (সুরা হুমাযা)

) কৃপণ ব্যক্তির জন্য তার সম্পদ কিয়ামতের দিন গলার ফাঁস হবে (সুরা ইমরা ১৮০)

) কৃপণ ব্যক্তি ও অন্যকে কৃপণতা শিক্ষাদানকারীকে আল্লাহ অপমান জনক আযাব দিবেন (সুরা নিসা ৩৭)

) কৃপণ ব্যক্তিরা সব সময় দুঃখ কষ্টে পবিত হবে সহজেই ধ্বংস হয়ে যাবে (সুরা লাইল)

) কৃপণ লোক মৃত্যুর পর আফসুস করবে আল্লাহর কাছে দুনিয়াতে আসার জন্য আরজ করবে যেন দান করতে পারে ( সুরা মুনাফিকুন ৯-১০)

) মসজিদে মাদরাসায় দান করা হল দীঘস্থায়ী সদকায়ে জারিয়া যার নেকি আপনি কিয়ামত পযন্ত লাভ করতে পারবেন (মুসলিম ৪০৭৭)

১০) ঈমানদাগনই মসজিদকে আবাদ করে ( সুরা তাওবা ১৮)

১১) মসজিদকে যারা আবাদ করে তারাই হেদায়েত প্রাপ্ত (সুরা তাওবা ১৮)

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে মসজিদ আবাদকারী হিসেবে ঈমানদার হিসেবে কবুল করুন, কৃপণতার অভিষাপ থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন সম্পদ জমা করে বারবার গননা করা হিসাব করার মত চরিত্র থেকে রক্ষা করুন, কৃপণতা করে ধ্বংস হওয়া থেকে কৃপণতা করে কবরে গিয়ে আফসুস করা থেকে রক্ষা করুন, জীবিত থাকা অবস্থায় সদকায়ে জারিয়া করার তৌফিক দান করুন আমিন

দানশীল আল্লাহর গজব থেকেও বেঁচে যেতে পারে। (সামেরির দানশিলতা)

সামেরীর নাম সকলেই শুনেছেন সে মুসা (আঃ) এর কওমকে গরুর পুঁজায় লাগিয়ে দিয়েছিল, যারা পুঁজা করেছে সকলের শাস্তি হয়েছিল একে অপরকে হত্যা করা, কিন্তু যখন সামেরির পালা আসল তখন জিবরাইল এসে হযরত মুসাকে নিষেধ করল যেন সামেরিকে হত্যা না করে তখন হযরত মুসা (আঃ) প্রশ্ন করলেন এয়া রব যে সকলকে কাফের বানালো মুশরিক বানালো তাকে কেন ছেড়ে দিব? তখন আল্লাহ তায়ালা বললেন সে খুবই দানশীল তাই তাকে হত্যা করিও না। একজন মুশরিক দানশীল হওয়ার কারনে আল্লাহ তায়ালা যদি তাকে দুনিয়ার মুসিবত থেকে রক্ষা করেন, তাহলে একজন মুমিন যদি দানশীল হন তার মর্যাদা কেমন হবে একবার চিন্তা করে দেখুন।

 

 

 

কোন মন্তব্য নেই

konradlew থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.