ইমাম বুখারীর মায়ের ওজিফা। সন্তানের জন্য মায়ের দোয়ার বরকত। রত্নগর্ভা মা হওয়ার আমল।

 

বিশ্বসেরা মাদের আমল। সন্তানকে লালন পালন সুশিক্ষা দেয়ার গুরুত্ব ইমাম বুখারীর মায়ের ওজিফা।


আজকালকার পিতা মাতা জানেনা সন্তানের জন্য কি আমল করবে, আজ ইমাম শাফেঈ, ইমাম বুখারী, বড় পীর, আল্লামা ইকবালের মত বিশ্বের শ্রেষ্ঠজনদের মায়েদের আমল বলব

যে আমলের কারনে তারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রত্নগর্ভা মা হয়েছেন, তাদের সন্তানরা কিয়ামত পর্যন্ত অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবেন

আল্লামা ইকবালকে আপনারা সকলে চিনেন, যিনি একাধারে একজন কবি একজন দার্শনিক ছিলেন উনার পিতা যে কাজ করতেন তাতে সুদ ছিল

যখন ইকবালের জন্ম হল তখন তার মা নিজের বুকের দুধ ইকবালকে পান করাননি বরং নিজের গহনা বিক্রি করে একটি ছাগল কিনলেন আর সে ছাগলের দুধ পান করিয়েই আল্লামা ইকবালকে লালন পালন করেন

এর কারন হিসেবে তিনি বলেন আমার স্বামীর সুদের কামাই খেয়ে আমার বুকে যে দুধ জমা হয় আমি সে দুধ আমার সন্তানকে পান করাতে চাইনা। সুবহানাল্লাহ

সে জন্য আমি আমার গহনা বিক্রী করে তা দিয়ে ছাগল কিনলাম আর সে ছাগলের দুধ দিয়েই আমার ইকবালকে লালন পালন করলাম, ফলে তিনি জগৎবিখ্যাত আল্লামা হলেন

ইমাম শাফেঈ (রহ) এর ব্যপারে নতুন করে বলার নাই উনার মা একজন ইয়েমেনি ছিলেন আর তার বাবা কুরাইশী ছিলেন, বাল্যকালেই তার পিতা মারা যায়।

আরো পড়ুন: রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে ৩টি দোয়া অবশ্যই করুন

ইমাম শাফেয়ীর মা সন্তানকে নিয়ে অনেক কষ্ট করেছেন তবে তার ইচ্ছা ছিল আমার সন্তান ওলামায়ে কেরামের মাঝেই বড় হউক জীবন অতিবাহিত করুক

সে জন্য অনেক কষ্ট করে টাকা পয়সা যোগার করে ইমাম শাফেয়ী (রহ) কে মক্কায় পাঠিয়ে দেন। ওলামায়ে কেরাম এর মাঝে বেড়ে উঠার জন্য

মায়ের কুরবানি ছিল প্ল্যানিং ছিল তাই সে কুরবানির বরকতে আল্লাহ তায়ালা ইমাম শাফেয়ীর মত ইমাম সৃষ্টি করে দিলেন।

তেমনিভাবে ইমাম বুখারীর (রহ) স্মরণশক্তি খুব বেশী ভালো ছিল, কিন্তু আফসুসের বিষয় বাল্যকালেই তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন

দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য হেন কোন চিকিৎসা নাই তিনি করান নি, নিজের সব সম্পদ ইমাম বুখারীর দৃষ্টিশক্তির জন্য বিলিয়ে দিলেন তবুও সফল হলেন না

তখন ইমাম বুখারীর মা প্রতিদিন রাতে তাহাজ্জুদে সন্তানের দৃষ্টিশক্তির জন্য দোয়া করতে লাগলেন, হে আল্লাহ আমার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দাও

এভাবে বেশ কিছুদিন দোয়া করার পর একদিন তিনি হযরত ইবরাহিম (আ) কে স্বপ্নে দেখেন, তিনি বলছেন তোমার সন্তানের দৃষ্টিশক্তি ফিরে এসেছে

সকালে উঠে দেখেন ইমাম বুখারী চোখ সম্পূর্ণ সুস্থ।  এসব ঘটনা আমাদের জন্য উদাহরণ যে জগৎসেরা স্কলারগন কিভাবে মায়ের কুরবানির কারনে জগৎসেরা হয়েছেন।

আরো পড়ুন: ৭ আসমান ৭ জমিন থেকে ভারি আমল

এবারের ঘটনাটি সবচেয়ে মজার, হাজার বছর আগে মদিনায় ফারুক ও ছালেহা নামক দুজন দম্পতি বসবাস করতেন, ফারুক জিহাদে বের হয়ে যাচ্ছেন

নিজের স্ত্রী তখন গর্ভবতী, স্ত্রীকে ফারুক জিহাদে যাওয়ার সময় ৩০ হাজার দিনার দিলেন, আর বললেন এই দিনারগুলি হেফাজত করবে

তখনকার ৩০ হাজার দিনার বর্তমানের প্রায় ১৫ কোটি টাকা হবে, এতগুলি টাকা নিজের স্ত্রিকে দিয়ে বলেন তুমি এ টাকাগুলি যথাযথ হেফাজত করবে

স্বামী ফারুক যুদ্ধে চলে গেল আর ফিরে আসার নাম নাই, এদিকে ছালেহার সন্তান জন্ম হল সন্তান আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল

এভাবে দীর্ঘ ৩০ বছর কেটে গেল, ৩০ বছর পর ফারুক যুদ্ধ থেকে ফিরে আসল, এসেই প্রথমে মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করলেন

নামাজ শেষে দেখতে পেলেন এক নৌজোয়ান কোরান হাদিসের দরস দিচ্ছেন অত্যন্ত চমৎকারভাবে, তার নাম হল শেখ আবদুর রহমান

ফারুক ঘরে গিয়ে স্ত্রীর সাথে মিলিত হন, স্ত্রী ৩০ বছর পর স্বামীকে পেয়ে মহাখুশি, ফারুক স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন আমার সে ৩০ হাজার দিনার কোথায়

স্ত্রী বলেন আপনি কি মসজিদে নামাজ পড়েছেন? ফারুক বলেন পড়েছি, স্ত্রী বলেন সেখানে কি কোন আলেমকে দেখেছেন, ফারুক বলেন অনেক আলেম দেখেছি

তবে তার মধ্যে আবদুর রহমান নামক এক আলেম এর পান্ডিত্য জ্ঞান আমাকে মুগ্ধ করেছে

স্ত্রী বলেন সে আলেমকে আপনার কেমন লেগেছে, ফারুক বলেন খুব ভালো লেগেছে, এমন আলেম দেখে আমার মনের খাহেশ জেগেছে যদি এই আলেম আমার সন্তান হতো?

স্ত্রী বলেন আপনি আপনার সন্তানকে এমন আলেম বানানোর জন্য কত টাকা খরচ করতে? স্বামী বলেন আমি আমার জীবনের সব কামাই তার জন্য খরচ করে দিতাম

তখন স্ত্রী বলেন হ্যাঁ আপনি আমাকে যে ৩০ হাজার দিনার দিয়ে গেছেন সে ৩০ হাজার দিনার আমি আপনার সন্তানকে এমন আলেম বানানোর কাজেই ব্যয় করেছি এবং এভাবে আপনার সম্পদকে আমি হেফাজত করেছি

শুনে ফারুক আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন, তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন, যখন শুনলেন সে নৌজোয়ান শায়খ আবদুর রহমান তারই সন্তান।

আরো পড়ুন: ১ মিনিটে যৌবন শক্তি বৃদ্ধির আমল

এভাবেই মায়েরা সন্তানের জন্য কুরবানি দিয়েছেন বলেই এই জগত ইমাম শাফেয়ীর মত আলেম পেয়েছেন, বড় পীর আবদুল কাদের জিলানির মত শায়খ পেয়েছেন

ডঃ আল্লামা ইকবালের মত কবি দার্শনীক পেয়েছেন, শায়খ আবদুর রহমানের মত জগত বিখ্যাত মুহাদ্দিস পেয়েছেন

ইমাম বুখারীর মত হাদীসের ইমাম পেয়েছেন। এখনো আমাদের মায়েরা কুরবানি করে যাচ্ছেন, তবে সে কুরবানি যদি ইমাম বুখারীর মায়ের মত হত

সে কুরবানি যদি ইমাম শাফেয়ীর মায়ের মত হত, সে কুরবানি যদি আবদুল কাদের জিলানির মায়ের মত হত তাহলে আজো

আমাদের সন্তানেরা জগত উজালা করা আলেম হতেন স্কলার হতেন দুনিয়াকে কোরান হাদীসের নুরে আলোকিত করতে পারতেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রত্যেক মায়েদেরকে এই ঘটনাগুলি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন সঠিক প্ল্যানিং  মেহনত ও কুরবানির মাধ্যমে সন্তানকে মানুষের মত মানুষ গড়ার তৌফিক দান করুন আমিন

 


কোন মন্তব্য নেই

sbayram থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.