৭৫০০০ ফেরেশতার দোয়া লাভের আমল। সহজ আমল ওজনে ভারী
৭৫০০০ ফেরেশতার দোয়া লাভের আমল। সহজ
আমল ওজনে ভারী
আমলটি খুব সহজ – আমলটি সকালে করলে সন্ধ্যা পযন্ত ৭৫ হাজার ফেরেশতা আপনার মাথার
উপর ছায়া সৃষ্টি করবে, তারা সারাদিন আপনার জন্য কল্যানের
দোয়া করবে, আমলটি যদিও হালকা কিন্তু ফজিলতের দিক থেকে খুবই
ভারী, এমন ফজিলতময় আমলের জন্য পৃথিবীর সকলেই পাগল- আমলটি সম্পর্কে পরিস্কারভাবে জানতে হলে আজকের আলোচনাটি শেষ পর্যন্ত অবশ্যই
শুনবেন প্রথমে কয়েকটি হাদিস ও সাহাবীদের ঘটনা জেনে রাখুন তারপর আমলটি জানাব
ইবনে উমার (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ আমল হল, (মু’মিন) মুসলিমের মনে তোমার আনন্দ ভরে দেওয়া, অথবা তার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া অথবা তাকে রুটি খাওয়ানো। (বাইহাক্বী ৭৬৭৮,)
নবী সাহাবাগনের চরিত্র ছিল অপরের কল্যান কামনা, কিন্তু আমাদের চরিত্র হল নেতা অপর নেতার অকল্যান কামনা করে, ভাই অপর ভায়ের অকল্যান কামনা করে, চেয়ারওয়ালা অপর চেয়ারওয়ালা অকল্যান কামনা করে। ব্যবসায়ী অপর ব্যবসায়ীর অকল্যান কামনা করে। চাকরীর সহপাটি অপর সহপাটির অকল্যান কামনা করে। সে জন্য আমাদের দোয়া কবুল হয়না।
এক সাহাবী ৩০০ টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে আনল বউ বলে কত দিয়ে নিছ? সাহাবী বলে ৩০০, বউ বলে কি বল এটাতো ৬০০ টাকার ঘোড়া, তখন সাহাবী ঘরে ঢুকে সিন্দুক থেকে আরো ৩০০ টাকা নিয়ে সে বিক্রেতা সাহাবীর কাছে গিয়ে বলে ওগো আমার ভাই তুমিতো ভুলে তোমার ৬০০ টাকা দামের ঘোড়া আমার কাছে ৩০০ টাকা দিয়ে বিক্রী করে দিছ, নাও আমার বউ সাক্ষি দিছে তোমার ঘোড়াটি ৬০০ টাকা মূল্যের আমি তাই আরো ৩০০ টাকা নিয়া তোমার কাছে আসছি। এটার নাম হল খায়েরখাহি। কল্যাণ কামনা করা।
আরো পড়ুন: ৪ বার বেহুশ হয়ে হযরত আবু হুরায়রা (রা) হাদিসটি বলেছেন
বাগদাদ এক সময় ছিল এলম ও আমলের শহর, তাবেয়ীদের
যুগে যখন সারা বিশ্বে মুসলমানদের জয়জয়কার চলছিল তখন এক ইহুদী মুসলমানদের সম্পর্কে
জানার জন্য বাগদাদে সফরে আসল, সে সন্ধ্যা বেলায় এক মুসাফির খানায় উঠল আর মুসাফির খানায়
থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিষ কিনতে বাজারে গেল এক দোকানে গেল দোকানদার বলল ভাই
আমার কাছে জিনিষ গুলি আছে তবে তা আমি তোমার কাছে বেচবনা তুমি আমার সামনে যে
দোকানটি আছে তাতে যাও সে দোকান থেকে কিনে নিয়ে যাও, ইহুদী সামনের দোকান থেকে সবকিছু
কিনে আগের দোকানে আবার আসল আর বলল ভাই এসব জিনিষ আপনার দোকানে ছিল কিন্তু আপনি
আমার কাছে বিক্রী করলেননা কেন? দোকানি বলল ভাই আমি সারাদিন অনেক বিক্রী করেছি, কিন্তু
দেখলাম আজ সারাদিন আমার সামনের দোকানদার আমার মুসলমান ভাই কোন কাস্টমার পায়নি তাই
সন্ধ্যা বেলায় আমি আমার ভায়ের উপকার করার নিয়তে আপনাকে তার দোকানে পাঠালাম কেননা
আমাদের নবী বলেছেন (খাইরুন ন্নাসি মান এয়ান ফাউন নাস) সেই উত্তম
মানুষ যে মানুষের উপকার করে। একথা
শুনে ইহুদী বলল আমি বুঝে গেলাম আজ ইসলামের কেন এত বিজয়। আমি বুঝলাম কেন চারদিকে
ইসলামের জয়জয়কার। তুমি যদি পার তোমাদের ধর্মের কলমাটি আমাকে পড়াও আমি এখনই ইসলাম
কবুল করব।
বুখারী ১২৭৭ নং হাদীস হযরত সাহল (রা) বয়ান করেন
এক মহিলা নবী (দ) এর কাছে
নিজ হাতে বুনে চাদর নিয়ে আসল, নবীজির তখন চাদরের খুব প্রয়োজনও ছিল, হযরত সাহল
বলেন নবীজি চাদরটি জরিয়ে যখন আমাদের কাছে আসলেন তখন এক লোক এসে সে চাদরের প্রসংশা
করতে লাগল আর তা চেয়ে বসল,
নবীজি তা তাকে দিয়ে দিলেন, সাহাবাগন তাকে ধমকাতে লাগল কেন চাইলে, তখন সে বলল
এ চাদর আমি এজন্য নিয়েছি যা আমার নবীজির শরীর মোবারকের সাথে লেগেছে, সে চাদর দিয়ে
আমার কাফন হবে, আর
সত্যি সত্যি সে চাদর দিয়েই তার কাফন দেয়া হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে একবার এক লোক এসে বলল, আমি খুবই ক্ষুধার্ত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে তাঁর কোনো এক স্ত্রীর কাছে খাবারের জন্যে পাঠালেন। কিন্তু তিনি বলে দিলেন- যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর আরেকজনের কাছে পাঠালেন। তিনিও একই উত্তর দিলেন। এভাবে একে একে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সব স্ত্রীই একই কথা বললেন- যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, আমার কাছে পানি ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর সাহাবায়ে কেরামের মজলিসে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগন্তুককে দেখিয়ে ঘোষণা করলেন, আজকের এই রাতে কে তার মেহমানদারি করতে পারবে? আল্লাহ তাকে দয়া করবেন! এক আনসারি সাহাবী দাঁড়িয়ে গেলেন- আমি পারব! এরপর তিনি তার মেহমানকে নিয়ে বাড়ি চললেন। বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বললেন, তিনি আল্লাহর রাসূলের মেহমান, তার আপ্যায়নের ব্যবস্থা কর। স্ত্রী বলল, আমার কাছে যে বাচ্চাদের জন্যে রাখা সামান্য খাবার ছাড়া আর কিছুই নেই! সাহাবী বললেন, ঠিক আছে, তুমি ততটুকু খাবারই প্রস্তুত কর, বাতি জ্বালিয়ে দাও আর বাচ্চারা যখন রাতের খাবার চাইবে তখন তাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও। মেহমান ঘরে এলে বাতি নিভিয়ে দেবে আর তার সামনে আমরা খাওয়ার ভান করব। তিনি যখনই খেতে যাবেন, তখনই তুমি বাতিটি ঠিক করার মতো কিছু একটা করতে গিয়ে তা নিভিয়ে দেবে। এরপর এই পরিকল্পনা মোতাবেকই সবকিছু করা হল। খাবার প্রস্তুত করা হল। বাতি জ্বালানো হল। বাচ্চাদের ঘুম পারানো হল। মেহমান যখন খেতে যাবেন এমন সময় গৃহিনী গিয়ে কৌশলে বাতিটি নিভিয়ে দিলেন। আগন্তুক মেহমান দেখলেন, তার মেজবানও খাচ্ছে। তাই নিঃসঙ্কোচে তিনি খেয়ে নিলেন। কিন্তু আসলে তারা শুধু অন্ধকারে মেহমানের সামনে খাওয়ার ভান করছিল। পরিবারের সকলে সে রাতটি ক্ষুধার্তই কাটিয়ে দিল। পরদিন সকালবেলা ওই সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেন, তোমাদের দুজনের কাজ দেখে আল্লাহ মুগ্ধ হয়েছেন। তখন নাজিল হল পবিত্র কুরআনের এ আয়াত-
وَ
یُؤْثِرُوْنَ عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ وَ
لَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ ...
নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও তারা অন্যকে নিজেদের ওপর অগ্রাধিকার দেয়। নিজ মনের কার্পণ্য থেকে যারা বেঁচে রইল তারাই তো সফলকাম। (সূরা হাশর (৫৯) : ৯) -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৭৯৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৫৪
ইসলাম আমাদেরকে এ অতিথিসেবাই শিক্ষা দেয়। তিনি একজন আনসারি সাহাবী ছিলেন। নাম আবু তালহা। তার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন।
-রাসুল (সা.) বলেন,
‘যে ব্যক্তি মানুষের সঙ্গে সদয় ব্যবহার ও দয়া করে না, আল্লাহ তায়ালাও তার সঙ্গে সদয় ব্যবহার এবং দয়া দেখাবেন না।
অন্য হাদিসে আছে, ‘আমার উম্মতের বহু লোক নামাজ ও রোজার আধিক্যের কারণে জান্নাতে যাবে না। বরং আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরের পরিশুদ্ধতা, আন্তরিকতা, দানশীলতা ও সব মুসলমানের প্রতি দয়ার্র্দ্র হওয়ার কারণে তাদের প্রতি করুণা করবেন। ফলে তারা জান্নাতে যাবে।’
আরো পড়ুন: ১ মিনিটে ৮৭ হাজার উটের মালিক হওয়ার ওজিফা
হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার বিপদগুলোর কোনো একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন।’ এ জন্য এই মহৎ গুণটি প্রত্যেক মুসলমানের মধ্যে থাকা চাই। -(আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৫২)
মহানবী (সা.) বলেন,
‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র
দান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান
করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ হজরত আবু হুরায়রা (রা:) ও হজরত
ইবনে ওমর (রা:) থেকে বর্ণিত, তারা বলেন, রাসূল (সা:)
বলেছেন, কোনো মুসলমান যখন অন্য মুসলমানের উপকারের
জন্য অগ্রসর হয় এবং উপকারটি সম্পন্ন করে, তখন আল্লাহ তার মাথার ওপর ৭৫ হাজার ফেরেস্তা
ছায়া সৃষ্টি করে দেন। এ ফেরেশতারা
তার জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করতে থাকে। উপকার
টা সকালে করা হলে বিকাল পর্যন্ত দোয়া চলে, আর বিকালে করা হলে ফেরেশতারা
সকাল পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। আর
সে ব্যক্তির প্রত্যেক কদমে একটি করে গোনাহ মাফ হয় এবং একই সাথে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি
পায়। [ইবনে হিব্বান মুনজিরি:৩৮৬৮]।
কোন মন্তব্য নেই